RECENT COMMENTS

ডাক্টার জাকির নায়েক-এর জীবনী।

ছবি সংগ্রহ- গুগল
বর্তমান বিশ্বে যে কয়জন জ্ঞানী ও পণ্ডিত ব্যক্তি আছেন তাদের মধ্যে ডা. জাকির নায়েক অন্যতম। ড: জাকির নায়েক একজন ভারতীয় ইসলামী চিন্তাবিদ, বক্তা ও লেখক। পেশায় তিনি একজন সার্জন চিকিৎসক হলেও, নিজেকে বিভিন্ন ধর্মের ছাত্র এবং একজন ইসলাম প্রচারক হিসেবে পরিচয় দিতেন। তিনি একাধারে কুরআন, হাদিস, বাইবেল, বেদ, গীতা, সহ অনেক ধর্ম গ্রন্থের উপর পাণ্ডিত্য অর্জন করেছেন। তিনি সকল ধর্মের মধ্যে সাদৃর্শ-বৈসাদৃর্শ তুলে ধরার মাধ্যমে সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি বিশ্বব্যাপী ইসলাম প্রচার করে আসছেন।
জন্ম ও পরিবারঃ ডঃ জাকির নায়েক একজন ভারতীয় ইসলাম প্রচারক। তিনি ১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মুম্বাই শহরের উপকূলীয় মহারাষ্ট্রের রত্নগিরিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম জাকির আব্দুল করিম নায়েক।
তার বাবার নাম বাবা আব্দুল করিম নায়েক। তার বাবা পেশায় একজস চিকিৎসক এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন। আব্দুল করিম নায়েক ৮৭ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। ডঃ জাকির নায়েক এর স্ত্রী, ফারহাত নায়েকও একজন চিকিৎসক এবং আইআরএফ এর নারীদের শাখায় কাজ করেন । তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলের নাম ফারিক জাকির নায়েক ও মেয়ের নাম রুশদা নায়েক। আলহামদুলিল্লাহ! ফারিক জাকির নায়েক মাত্র ১৩ বছর বয়সে স্কুলে অধ্যয়নকালে আল-কুরআন এর হাফেজ হয়েছিলেন। আট বছর বয়স থেকে থেকে  তার বাবার সাথে ইসলামের দাওয়াতের কাজ শুরু করেন এবং চেন্নাই, পুনে, দুবাই, ইতালি, ত্রিনিদাদ এবং বিশ্বের অন্যান্য শহরগুলিতে হাজার হাজার মানুষের সামনে ইংরেজি এবং আরবিতে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিতে শুরু করেছিলেন।
লেখাপড়াঃ ড: জাকির নায়েক মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। তারপর তিনি কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। তিনি মেডিসিনের ওপর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নাইর হসপিটালে ভর্তি হন। অতঃপর, তিনি ইউনিভার্সিটি অফ মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অফ মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।
তোললা জাকির নায়েকঃ ড: জাকির নায়েক জাকির নায়েক তার শৈশব থেকে ডাক্তারী পাশ করা পর্যন্ত তোতলা ছিলেন। কিন্তু ইসলামী দাওয়ার কাজ শুরু করার পর মহান আল্লাহর রহমতে তার কথা বলার জড়তা কেটে যায়। এ প্রসঙ্গে জাকির নায়েক বলেন, আমি যখন মুসলিমদের সাথে ধর্ম নিয়ে কথা বলতাম তখন তোতলাতাম। নিজের সামটাও স্পষ্ঠ করে উচ্চারণ করতে পারতাম না। কিন্তু আলহামদুল্লিাহ, যখন খৃষ্টান মিশনারীদের সাথে কথা বলার সময় তোতলাতাম না, সবই আল্লাহর কৃপা।
পেশাঃ ছাত্রজীবনে তিনি বিখ্যাত শৈল্যচিকিৎসক ক্রিস বার্নাডের মত সার্জন হবার স্বপ্ন দেখখতেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন পৃথিবীর অন্যতম একজন সফল ডাক্টার হবেন। ডাক্টার হওয়া ছাড়া, ইসলামিক স্কলার হওয়ার ইচ্ছাও ছিলো না। তাছাড়া শৈশব থেকে তোতলা থাকায় মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার কোন পরিকল্পনা ছিলো না। নায়েক ২০০৬ সালে বলেছিলেন যে ১৯৮৭ সালে তিনি বিশিষ্ট ধর্ম গবেষক আহমেদ দিদাত এর সাথে সাক্ষাত লাভ করেন এবং ধর্ম বিষয়ে তার গবেষণা দেখে অনুপ্রাণিত হন। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন।
তিনি ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করেছেন এবং যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক সত্যের সাথে মিল রেখে কুরআন, খাঁটি হাদীস এবং অন্যান্য ধর্মীয় ধর্মগ্রন্থকে ভিত্তি হিসাবে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ভুল ধারণা পরিষ্কার করেন। জনসমক্ষে আলোচনার পরে শ্রোতাদের দ্বারা উত্থাপিত চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নগুলির সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ এবং দৃঢ় প্রত্যয়ের জন্য তিনি গতিশীল আন্তর্জাতিক বক্তা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। পেশাগত জীবনে তিনি একজন ডাক্তার। শল্যচিকিৎসায় (সার্জারি) ডিগ্রি অর্জন করেন।
ডা. জাকির নায়েকের দৃষ্টিভঙ্গিঃ ডা. জাকির নায়েক বলেন, ইসলামের বিভিন্ন দিক গবেষণার মাধ্যমে ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে মানুষকে সত্য ও সঠিক পথের সন্ধান দেয়া এবং ইসলামের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের মুখোশ উন্মোচন করে ইসলামের সঠিক বানী সবার মাঝে পৌঁছে দেয়া। জাকির নায়েক তার লক্ষ সম্পর্কে বলেন, আমার লক্ষ হচ্ছে শিক্ষিত মুসলিম যুবকগনকে তাদের নিজস্ব ধর্ম সম্পর্কে সচেতন করা এবং ধর্ম সম্পর্কে তাদের পুরাতন ও ভুল ধারনা থেকে বাহিরে আনা।
তিনি আরও বলেন তার লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষিত মুসলমানরা যারা তাদের নিজ ধর্মকে ত্রুটিপূর্ণ ও সেকেলে বলে মনে করেন তাদের ভুলধারণা ভেঙ্গে ইসলামের সঠিক পথে আনা। তিনি মনে করেন, প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইসলাম সম্বন্ধে ভুল ধারণাগুলো ভেঙে দেওয়া এবং পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলামের ওপর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। ডা. জাকির নায়েক এর মতে, তীব্র ইসলাম বিরোধী প্রচারণা সত্ত্বেও ২০০১ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ৩৪,০০০ মার্কিন নাগরিক ইসলাম গ্রহণ করে। নায়েকের ভাষ্য অনুযায়ী, ইসলাম একটি কার্যকারণ ও যুক্তির ধর্ম, এবং কুরআনে বিজ্ঞান সম্পর্কিত ১০০০ বাণী রয়েছে; যা তিনি পশ্চিমা ধর্মান্তরিত মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।
’ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ ও ‘পিস টিভি’ প্রতিষ্ঠাঃ নায়েক ২০০৬ সালে বলেছিলেন যে ১৯৮৭ সালে তিনি বিশিষ্ট ধর্ম গবেষক আহমেদ দিদাত এর সাথে সাক্ষাত লাভ করেন এবং ধর্ম বিষয়ে তার গবেষণা দেখে অনুপ্রাণিত হন। কখনও কখনও নায়েককে "দইদাত প্লাস" নামে অভিহিত করা হয়। ১৯৯১ সাল থেকে তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেছেন এবং ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানটি একটি অলাভ জনক ধর্ম গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যেখানে বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত সকল ধর্ম এবং ধর্মীয় গ্রন্থ সমূহ নিয়ে গবেষণা করা হয়। তিনি মুম্বাইতে ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অসহায় ও দরিদ্র মুসলিম যুবকদের স্কলারশিপ প্রদানের জন্য ইউনাইটেড ইসলামিক এইড প্রতিষ্ঠা করেন।
ইসলাম প্রচারের জন্য ২০০৬ সালে তিনি ”পিস টিভি” নামে একটি টেলিভিশন চ্যালেন তৈরি করেন। চ্যানেলটি "সত্য, ন্যায়বিচার, নৈতিকতা, সমগ্র মানবজাতির জন্য সম্প্রীতি এবং প্রজ্ঞা" এর আলোকে ইসলাম ধর্ম প্রচার করা হয়। পিস টিভি নেটওয়ার্কের পিছনে আদর্শ ও চালিকা শক্তি হলেন ডঃ জাকির নায়েক। তিনি ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে পিস টিভি ইংলিশ চালু করেছিলেন, এটি বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেখা ‘ইসলামিক’ পাশাপাশি বর্তমানে বিশ্বের যে কোনও ধর্মাবলম্বী ‘স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, যার ১০০ মিলিয়ন ভিউয়ারশিপ রয়েছে যার মধ্যে ২৫% অমুসলিম। এর পদক্ষেপে তিনি ২০০৯ সালের জুনে পিস টিভি উর্দু, ২০১১ সালের এপ্রিলে পিস টিভি বাংলা এবং ডিসেম্বর ২০১৫ সালে পিস টিভি চাইনিজ চালু করেছিলেন। পিস টিভি নেটওয়ার্ক আলহামদুলিল্লাহ প্রায় ২০০ মিলিয়নেরও বেশি দর্শক ছিলো।
কিন্তু ভারত সরকার ২০১২ সালে পিস টিভি চ্যানেল নিষিদ্ধ করেছে। ২০১৫ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের খবরে, একজন বেনামে ভারতীয় সাংবাদিকের বরাত দিয়ে মুম্বই পুলিশ তাকে "বিতর্ক সৃষ্টি করার কারণে" সম্মেলন করতে নিষেধ করেছে এবং ভারতীয় উপগ্রহ সরবরাহকারীরা তার টেলিভিশন চ্যানেল পিস টিভি সম্প্রচার করতে অস্বীকার করেছে।
বিতর্ক ও বক্তিতাঃ ডা. জাকির নায়েকের অনেক বিতর্ক এবং বক্তৃতা করেছেন এবং বলা হয় যে "সারা বিশ্বে প্রায় ২০০০ থেকে ৪০০০ এরও বেশি বক্তৃতা দিয়েছেন।” নৃবিজ্ঞানী থমাস ব্লম হ্যানস এর মতে, যে ডা. জাকির নায়েকের বিভিন্ন ভাষায় কোরআন ও হাদীস মুখস্থ করার পদ্ধতি এবং তাঁর সম্পর্কিত মিশনারী কাজকর্মই তাকে মুসলিম মহলে চরম জনপ্রিয় করে তুলেছে। তার অনেক বিতর্ক রেকর্ড করা হয় এবং ভিডিও এবং ডিভিডি মিডিয়া এবং অনলাইন এ ব্যাপকভাবে প্রচার ও বিতরণ করা হয়। তাঁর সকল আলোচনা ইংরেজিতে রেকর্ড করা হয় এবং মুম্বাইয়ের মুসলিম এলাকার কয়েকটি ক্যাবল নেটওয়ার্কগুলিতে এবং ’পিস টিভি’ চ্যানেলে প্রচার করা হয়। খুব দ্রুত ইসলামের ভাবার্থ মুসলিম, নন-মুসলিম সর্বোপরি সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছেন। তিনি যে বিষয়গুলির উপর বক্তব্য রাখেন সেগুলির মধ্যে অন্যতম হলো: "ইসলাম এবং আধুনিক বিজ্ঞান", "ইসলাম এবং খ্রিস্টান" এবং "ইসলাম এবং ধর্মনিরপেক্ষতা"।
তাঁর প্রথম বিতর্ক ছিল ১৯৯৪ সালে, "মুম্বাই মারাঠি পত্রিকা সংঘ" আয়োজিত বাংলাদেশি বিতর্কিত লেখিকা তাসলিমা নাসরিনের লেখা ‘লজ্জা’ গ্রন্থে ইসলাম সম্পর্কে "ধর্মীয় মৌলবাদ কি মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথে প্রতিবন্ধকতা?" শিরোনামে মতামত নিয়ে বিতর্ক। বিতর্কটি চার জন সাংবাদিকের উপস্থিতিতে কয়েক ঘন্টা ধরে চলে। ২০০০ সালের এপ্রিল মাসে জাকির নায়েক তাঁর সর্বাধিক প্রশংসিত বিতর্কগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হলো "কুরআন এবং বাইবেল: বিজ্ঞানের আলোতে" শীর্ষক শিকাগোতে উইলিয়াম ক্যাম্পবেলের সাথে বিতর্ক করেছিলেন। ওই বিতর্কে জাকির নায়েক সর্বাধিক প্রশংসা পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালের ২১ জানুয়ারী, জাকির নায়েক ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মে আল্লাহর ধারণা সম্পর্কে ভারতের বেঙ্গালুরুতে শ্রী শ্রী রবিশঙ্করের সাথে আন্তঃধর্মীয় আলোচনা করেছিলেন। এই বিতর্কটিও জাকির নায়েক প্রশংসা কুড়িঁয়েছিলেন।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে জাকির নায়েক ভারত থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে অক্সফোর্ড ইউনিয়নকে ধর্মীয় বির্তকের জন্য উস্মক্ত আহ্ববান করেছিলেন। প্রতি বছর ২০০৭ সালের নভেম্বর থেকে জাকির নায়েক মুম্বইয়ের সায়ন সোমাইয়ায় ১০ দিনের শান্তি সম্মেলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নায়েক সহ আরও বিশ জন ইসলামিক বক্তা ইসলামের উপর বক্তৃতা উপস্থাপন করেন।
অস্ট্রেলিয়া-২০০৪ এবং ওয়েলস-২০০৬ সম্মেলনঃ ২০০৪ সালে জাকির নায়েক অস্ট্রেলিয়ার ইসলামিক তথ্য ও পরিষেবা নেটওয়ার্কের আমন্ত্রণে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেখানে তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে কেবল ইসলামই মহিলাদের সত্যিকারের সাম্য প্রদান করেছে এবং "প্রকাশ্য পাশ্চাত্য পোশাক" মহিলাদের ধর্ষণে বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। সুশী দাস মন্তব্য করেছিলেন যে, " জাকির নায়েক ইসলামের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শ্রেষ্ঠত্বকে প্রশংসিত করেছেন এবং অন্যান্য ধর্ম এবং সাধারণভাবে পশ্চিমকে আলোকিত করেছেন"। তিনি পশ্চিমাদের আরও সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, ড: জাকির নায়েকের এই শব্দ "পৃথকীকরণ ও দৃঢ়প্রত্যাক্ষান মনোভাব পোষণ করেছিল।”
২০০৬ সালেন আগস্ট মাসে জাকির নায়েকের কার্ডিফওয়েলশ সাংসদ ডেভিস জাকির সায়েকের সফর ও সম্মেলন বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিল। সাংসদ ডেভিস বলেছিলেন যে, জাকির নায়েক হলো "বিদ্বেষপ্রবণ" মানুষ এবং তাঁর মতামত জনসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু কার্ডিফের মুসলমানরা জাকির নায়েকের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়োছলেন। এছাড়া, মুসলিম কাউন্সিল অফ ওয়েলসের সেক্রেটারি জেনারেল সলিম কিদওয়াই সাংসদ ডেভিসের সাথে জাকির নায়কের বিষয়ে একমত নন। তিনি বলেছিলেন যে "জাকির নায়েক সম্পর্কে যারা জানেন তারা জানেন যে জাকির নায়েক সবচেয়ে অবিতর্কিত ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম। তিনি ধর্মের মধ্যে মিলগুলির বিষয়ে কথা বলেন এবং আমাদের মধ্যে কীভাবে সমন্বয় রক্ষা করে চলতে হবে তা জানতে শেখায়। ডেভিস নায়েকের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কার্ডিফ কাউন্সিল বলেছিলেন যে তিনি সন্তুষ্ট যে তিনি এই সম্মেলনটি সুন্দর ভাবে হয়েছে এবং তিনি আর কখনও চরমপন্থী মতামত প্রচার করবেন না।
১১ সেপ্টেম্বর হামলা ও ওসামা বিন লাদেনঃ ২০০৮ সালে ৩১ জুলাই এ ‘পিস টিভি’ তে ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার বিষয়ে ড: জাকির নায়েক বলেছিলেন যে, “এটি একটি নির্লজ্জ ও স্পষ্ট বিষয় যে, টুইন টাওয়ারের উপর এই আক্রমণটি জর্জ বুশ নিজেই করেছিলেন।” তিনি ঘোষণা করে যে "এমনকি একজন বোকাও জানবে যে, 9/11 হামলা "একটি অভ্যন্তরীণ কাজ" এটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লু বুশ দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ঘোষণা করার জন্য তাকে যুক্তরাজ্য এবং কানাডায় প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।
সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে তাঁর মতামত এবং বক্তব্য মিডিয়াতে প্রায়শই সমালোচিত হয়েছিলো। ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কে যখন জাকির নায়েককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, বিন লাদেন একজন সন্ত্রাসী কিনা? তখন তিনি বলেছিলেন যে, যেহেতু তার সাথে দেখা হয় নি, তাকে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি, সেহেতু তার কোনও মতামত নেই এবং সে তার বন্ধুও নয় বা শত্রুও নয়। অন্য কোনও ব্যক্তির কাছে তথ্য দেওয়ার আগে তিনি আগে তথ্য যাচাই করে বিশ্বাস করেন। জাকির নায়েক আরও বলেছিলেন যে, "তিনি যদি ইসলামের শত্রুদের সাথে লড়াই করে থাকেন তবে আমি তার পক্ষে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাকে চিনি না। যদি সে আমেরিকাতে সন্ত্রাসবাদ চালায় তবে তার সাথে আছি কারণ বর্তমান সময়ে আমেরিকা হলো সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী। প্রত্যেক মুসলমানেরই উচিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিহাদ করা। বিষয়টি হলো তিনি যদি কোনও সন্ত্রাসবাদীর বিরুদ্ধে জিহাদ করে থাকেন তবে তিনি ইসলামের অনুসরণ করছেন। তিনি আরও বলেন, "ইসলামের কথা বললে যদি সন্ত্রাসী হতে হয় তবে সকল মুসলিমকে সন্ত্রাসী হওয়া উচিত।”
ইংল্যান্ড ও কানাডা থেকে বহিষ্কার: ২০১০ সালের জুনে জাকির নায়েককে ইংল্যান্ড এবং কানাডায় প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছিল। লন্ডন ও শেফিল্ডে তার বক্তব্যের আয়োজন করা হলে ব্রিটেনের তৎকালিন স্বরাষ্ট্র সচিব তেরেসা মে তাকে ব্রিটেন প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তেরেসা মে তার বহিষ্কারের আদেশে বলেন, ডা. নায়েকের বক্তব্য এবং তার আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। নায়েক বলেন স্বরাষ্ট্র সচিব রাজনৈতিকভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। নায়েকের আইনজীবী বলেন তেরেসার সিদ্ধান্ত ছিল অবৈধ ও সম্পূর্ণ অমানবিক। চলচ্চিত্র নির্মাতা মহেশ ভট্ট নায়েককে সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, এই নিষেধাজ্ঞার বাক স্বাধীনতার উপর হামলা এবং এই রায়টি হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করছিলেন। বিচারিক পর্যালোচনার জন্য তাঁর আবেদনটি ৫ নভেম্বর ২০১০ খারিজ করা হয়েছিল।
ভারতে শান্তি সম্মেলনঃ ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ ও ’পিস টিভি’র পক্ষ থেকে ২০০৭ সালের নভেম্বর মাস হতে প্রতি বছর মুম্বাই সিয়নের সুমাইয়া মিলনায়তনে ১০ দিন ব্যাপী শান্তি সম্মেলনের আয়োজন করে আসছে। উক্ত সম্মেলনে জাকির নায়েক সহ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ২০ জন ইসলামিক পণ্ডিত ভাষণ প্রদান করে থাকেন। এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের কয়েক লক্ষ মুসলমান ও অমুসলমান অংশ গ্রহণ করে থাকে। এই সম্মেলনে অনেক অমুসলমান ইসলাম ধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
গাম্বিয়া (২০১৪) সম্মেলনঃ জাকির নায়েক ২০১৪ সালে গাম্বিয়া বিপ্লবের ২০তম বার্ষিকী উদযাপনে অংশ নিতে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া জামেহে আমন্ত্রণে গাম্বিয়া সফর করেছিলেন। সেখানে তিনি ১১-২২ অক্টোবরের মধ্যে চারটি বক্তিতা দিয়েছেন। গাম্বিয়ার মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রীরা, ধর্মীয় নেতারা, শিক্ষার্থী এবং কয়েক হাজার মানুষ "সন্ত্রাস ও জিহাদ’ একটি ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি", "সঠিক দৃষ্টিকোণে ধর্ম", "দাওয়াহ বা ধ্বংস" এবং "ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা" সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তিতায় অংশ নিয়েছিলেন। এদিকে, তিনি গাম্বিয়া সুপ্রিম ইসলামিক কাউন্সিলের সাথে রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া জামেহের সাথেও সাক্ষাত করেছেন এবং গাম্বিয়ার ইমামদের সাথে একটি ইসলামিক সম্মেলন করেছেন।
মালয়েশিয়া (২০১২ ও ২০১৬) সম্মেলনঃ ড: জাকির নায়েক ২০১২ সালে মালয়েশিয়ায় চারটি বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এই বক্তৃতাটি জোহর বহরু, ইউনিভার্সিটি টেকনোলজি এমএআরএ, শাহ আলম, কুনানটান এবং পুতুল ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মালয়েশিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহামাদ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং কয়েক হাজার মানুষ বক্তৃতায় অংশ নিয়েছিলেন। নায়েকের বক্তৃতার আয়োজকরা বলেছেন, তাদের উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো।
২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে জাকির নায়েক আরও ছয়টি বক্তৃতা দিয়েছেন। মালয়েশিয়ায় তাঁর দুটি বক্তৃতা "হিন্দু ধর্ম ও ইসলামের মধ্যে মিল" এবং "কুরআন ও ঈশ্বরের শব্দ" শিরোনামে বক্তৃতাদুটি আন্ত-বর্ণীয় উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলোছলো।
সঙ্গীত ও নাচঃ ড: জাকির নায়েক সঙ্গীতকে অ্যালকোহলের সাথে তুলনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে দু'টোই প্রকৃতির মাতাল। নাচ-গান ইসলামে নিষিদ্ধ তাই তিনি নাচ-গানের তীব্রনিন্দা করেন।
চুরির শাস্তিঃ ড: জাকির নায়েক বলেছিলেন যে কোনও দোষী ব্যক্তির সাজা পেতেই হবে। তিনি চুরির জন্য হাত কাটার পক্ষে সমর্থন করেণ। দেশে ফৌজদারি মামলা কমাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এটি বাস্তবায়নের পরামর্শও দিয়েছেন।
মহিলা অধিকার বিতর্কঃ ড: জাকির নায়েক তার স্ত্রীর "আলতোভাবে" মারধরের সমর্থনে কথা বলেছেন বলে জানা যায়। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন যে "পরিবারের যতদূর প্রশ্ন, একজন পুরুষ নেতা। সুতরাং, তার অধিকার আছে" তবে তার স্ত্রীকে "হালকাভাবে" মারধর করা উচিত। তিনি আরও বলেছিলেন যে মুসলমানরা তাদের মহিলা দাসদের সাথে যৌন মিলনের অধিকার রাখে যেখানে তিনি ক্রীতদাসদের "যুদ্ধের বন্দী" হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।
সমকামীতাঃ ড: জাকির নায়েক এলজিবিটি সম্প্রদায়কে "পাপী মানসিক সমস্যায় ভুগছেন" কারণ তারা অশ্লীল সিনেমা দেখেন এবং সমকামী। "কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী তিনি সমকামীদের জন্য "মৃত্যুদণ্ড" দেওয়ার সুপারিশ করেছেন।
জৈবিক বিবর্তনঃ ডারউইনের তত্ত্বের বিবর্তনকে বাতিল করে নায়েক বলেছিলেন যে বিবর্তন তত্ত্বটি "কেবলমাত্র একটি অনুমান এবং সর্বোপরি একটি অপ্রমাণিত অনুমান"। নায়েকের মতে, বেশিরভাগ বিজ্ঞানী "তত্ত্বটিকে সমর্থন করেন কারণ এটি বাইবেলের বিরুদ্ধে ছিল; কারণ এটি সত্য ছিল না।" নায়েক যুক্তি দিয়েছিলেন যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলি কুরআন দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, তিনি ২০১০ সালে বলেছেন যে কুরআনের কয়েকটি আয়াত ভ্রূণতাত্ত্বিক বিকাশের সঠিকভাবে বর্ণনা করে।
নায়েক যুক্তি দিয়েছিলেন, "ডারউইন যা বলেছিলেন তা কেবল একটি তত্ত্ব ছিল। 'ফ্যাক্ট অব ইভোলিউশন' বলে কোনও বই নেই- সমস্ত বই থিওরি অফ ইভোলিউশন।" তিনি আরও যোগ করে বলেছেন যে, "কুরআনে একটিও বক্তব্য নেই, যা বিজ্ঞান এখনও ভুল প্রমাণ করেছে। হাইপোথিসিস কুরআনের বিরুদ্ধে গেছে- তত্ত্বগুলি কুরআনের বিপরীতে গেছে। এমন কোন বৈজ্ঞানিক সত্য নেই, যা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে গেছে।”
মিডিয়ার সমালোচনাঃ ড: জাকির নায়েক বিশ্ব মিডিয়াকে "বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ারের চেয়েও বিপজ্জনক অস্ত্র হিসাবে অভিহিত করেছেন, যা কালোকে সাদা এবং ভিলেনকে নায়কে রূপান্তরিত করে"। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, "আমাদের ইসলাম সম্পর্কিত ভুল ধারণা, ভুল ব্যাখ্যা, ভুল ব্যাখ্যা এবং অপসারণের জন্য একই মিডিয়া ব্যবহার করা উচিত।" তিনি দাবি করেছিলেন, পশ্চিমা শক্তি এবং মিডিয়া দ্বি-মানের কৌশল অবলম্বন করে, যারা ইসলামকে কুখ্যাত করার জন্য মুসলমানদেরকে চরমপন্থী ও মৌলবাদী হিসাবে বর্ণনা করে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া, "কুরআন বা সুন্নাহ থেকে একটি শব্দ বাছাই করে এবং এর ভুল ব্যাখ্যা করে" এবং "এটির সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কিছু কথা বলে ইসলামকে বিকৃত করা হয়।”
ড: নায়েক আরও বলেছিলেন, "যদি কোনও মুসলিম মহিলা হিজাব বা ওড়না পরেন তবে এটিকে মহিলা পরাধীনতা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়, তবে কোনও নান মহিলা যদি তা করেন তবে এটি শ্রদ্ধা ও বিনয়ের চিহ্ন হয়ে যায়। একটি ৫০ বছর বয়সী মুসলিম ব্যক্তি ১৬ বছর বয়সী মুসলমানকে নারীকে বিয়ে করলে বড় শিরোনাম হয়ে যায়। আর যদি ৫০ বছর বয়সী অমুসলিম ছয় বছর বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণ করে তবে তা শুধুই সংক্ষিপ্ত সংবাদ বা ফিলার হিসাবে উপস্থিত করা হয়। তারা বলে যে ইসলাম নারীদের অধিকার দেয় না এবং এটি একটি অযৌক্তিক ধর্ম তারা ইসলামকে মানবতার সমস্যা হিসাবে বর্ণনা করেছেন যদিও এটি মানুষের সমস্ত সমস্যার সমাধান। এই শব্দটি মূলত পশ্চিমা শব্দগুলির ভুল ব্যাখ্যা করা 'মৌলবাদী' এবং 'উগ্রবাদী' শব্দগুলির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সত্যিকারের মুসলমানকে অবশ্যই সঠিক দিকে চরমপন্থী হতে হবে অত্যন্ত দয়ালু, প্রেমময়, সহনশীল, সৎ ও ন্যায়বিচারের দ্বারা। ভারতীয়রা যখন তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালাচ্ছিল, তভর ব্রিটিশ সরকার তাদেরকে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে চিহ্নিত করছিল। দেখা গেলো একই তৎপরতা, একই লোক, তবে দুটি ভিন্ন সম্প্রদায়, ক্ষেত্রেই লেবেলযুক্ত মুসলমানদের মিডিয়াতে সন্ত্রাসী হিসাবে উল্লেখ করা হয়।
হলিউডের সমালোচনাঃ ড: জাকির নায়েক তীব্রভাবে হলিউডের মুভির সমালোচনা করে বলেছিলেন যে, "ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য হলিউডে কয়েকশ চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছিলো। ঐসব মুভিতে 'আল্লাহু আকবার' শব্দটি খুন করার শ্লোগান হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা যায়। 'আল্লাহু আকবার' বলতে শুনলে অন্যরা ভয় পেয়ে যায়- তারা ভাবে যে সে তাকে হত্যা করবে! ড: জাকির বলেন, কেউ যদি সত্যিই জানতে চান যে ইসলাম কতটা ভাল, তবে তাকে তার খাঁটি উৎসগুলি অধ্যয়ন করতে হবে। তিনি সালমান রুশদির মতো ইসলামের সমালোচনা করা মুসলমানদেরও সমালোচনা করেন।
ধর্মত্যাগঃ ড: জাকির নায়েক বলেছেন যে মুসলমানরা ইসলাম থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছে তাদের অবশ্যই মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত নয়। তবে ইসলামী আইনের আওতায় যারা ইসলাম ত্যাগ করেন এবং তারপরে "অ-ইসলামিক বিশ্বাস প্রচার ও ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলেন" তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে যে নায়েকের মতে, "ইসলামে মুরতাদদের মৃত্যুর শাস্তি নেই- যতক্ষণ না মুরতাদ তার নতুন ধর্ম প্রচার শুরু করে; তারপরে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে।"
মুসলমানদের ধর্মযুদ্ধঃ গাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক বক্তৃতায় জাকির নায়েক জিহাদের নামে বিশ্বজুড়ে অত্যাচারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন, যেখানে নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। তিনি বলেন যে, “জিহাদ মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়েরই দ্বারা বোঝা যায়, জিহাদ মানে সংগ্রাম এবং সংগ্রাম করা সমাজকে আরও উন্নত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। জিহাদের সর্বোত্তম রূপ হলো কুরআনের শিক্ষাকে ব্যবহার করে অমুসলিমদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা। নায়েকের মতে, যে নির্দোষ ব্যক্তির হত্যাকান্ড হয়, তা হয় মুসলিম বা না হয় ইসলাম দ্বারা নিষিদ্ধ কোন চরমপন্থির কোন কাজ। পশ্চিমা শক্তি এবং মিডিয়া যারা মুসলমানদেরকে চরমপন্থী ও মৌলবাদী হিসাবে বর্ণনা করে। তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন যে, এমনকি ইসলামী জিহাদেও কোন ব্যক্তিকে কখন এবং কীভাবে হত্যা করা ন্যায়, সেই সম্পর্কে নিয়মকানুন তৈরি করা হয়েছে। কারও মনগড়া জিহাদ ইসলামে সমর্থন যোগ্য নয়।
দুবাইয়ের আল-খাওয়ানিজে প্রদত্ত অন্য এক বক্তৃতায় নায়েক বলেছিলেন যে, অমুসলিম এমনকি কিছু মুসলমানদের দ্বারা ইসলামের জিহাদ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি ভুল ব্যাখ্যা করা এবং ভুল ধারণা বোঝানো হচ্ছে।  'জিহাদ'-এর সাথে 'পবিত্র যুদ্ধ'-এর কোনও সম্পর্ক নেই যা কখনও ব্যবহার হয় না। কুরআন বা সুন্নাহ এবং ক্রুসেডাররা প্রথমে ব্যবহার করেছিল যারা খ্রিস্টধর্মের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিল। তিনি বরং ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, 'জিহাদ' শব্দের অর্থ আসলে নিজের মন্দ প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করা বা লড়াই করা, সমাজকে আরও উন্নত করা। যুদ্ধের ক্ষেত্রে আত্মরক্ষায় এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
সন্ত্রাস, হত্যা ও আত্মঘাতী বোমা হামলাঃ সন্ত্রাসী শব্দের অর্থ কী? সংজ্ঞায়িতভাবে সন্ত্রাসবাদী হলো আতঙ্কিত ব্যক্তি। সুতরাং এই প্রসঙ্গে প্রত্যেক মুসলমানকে প্রতিটি অসামাজিক উপাদানগুলির জন্য সন্ত্রাসী হওয়া উচিত। সুতরাং এই প্রসঙ্গে কোনও মুসলমানকে কখনও কোনও নিরীহ মানুষকে আতঙ্কিত করা উচিত নয়।"
নায়েক হিটলারের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন যে "তিনি মুসলমান ছিলেন না, তিনি ৬ মিলিয়ন ইহুদিদের জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বের বৃহত্তম সন্ত্রাসবাদী।"
হত্যার বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে নায়েক বলেন, "কোরআন বলে- কেউ যদি একজন নিরীহ মানুষ, মুসলিম বা অমুসলিমকে হত্যা করে, তবে সে পুরো মানবতাকে হত্যা করেছে। সুতরাং যে কোনও মুসলিম নিরীহ মানুষকে কীভাবে হত্যা করতে পারে?" তবে ইসলাম সঠিক বিচারের মাধ্যমে একজন ব্যক্তিকে হত্যার বৈধতা দিয়েছেন।
ড: জাকির নায়েককে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ সম্পর্কে তার মতামত জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি দৃঢ়তার সাথে উত্তর দিয়েছিলেন যে, এটি ইসলামে অনুমোদিত ছিল এবং নিরীহ মানুষ মারা গেলে এটি হারাম। তবে, যদি আত্মঘাতী বোমা হামলার কৌশল হিসাবে ব্যবহৃত হয় যুদ্ধ তবে এটি অনুমোদিত হতে পারে উদাহরণস্বরূপ তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান আত্মঘাতী বোমা হামলাকে যুদ্ধের কৌশল হিসাবে ব্যবহার করেছিল।
তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে ডাঃ জাকিরঃ ডঃ জাকির নায়েক বাংলাদেশী লেখিকা তসলিমা নাসরিনের "লজ্জা" নামক বইকে কেন্দ্র করে ভারতের মুম্বাইয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের দ্বারা আয়োজিত একটি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বইটি থেকে ইসলামকেন্দ্রিক বিভিন্ন উদ্ধৃতিকে ভূল ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি হিসেবে তুলে ধরেন। এছাড়াও, উক্ত অনুষ্ঠানে তিনি তসলিমা নাসরিনের উদ্দেশ্যে তার সাথে সরাসরি বিতর্কে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ ব্যক্ত করেন।
হলি আর্টিজান জঙ্গি হামলাঃ ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত জঙ্গি হামলায় জড়িত পাঁচ সন্ত্রাসীর মধ্যে অন্যতম রোহান ইমতিয়াজ এবং নিব্রাস ইসলাম ড: জাকির নায়েকের অনুসারি এবং তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার বক্তব্য শেয়ার করত এমন অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ ও ভারতে ব্যাপক সমালোচনা ওঠে। তাকে নিষিদ্ধ করতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে দেশটির বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিত্ব। এ তালিকায় ছিলেন বিভিন্ন ইসলামী নেতারাও।
উল্লেখ্য যে, "আল্লাহু আকবার" উচ্চারণ করে হামলা চালায় একদল জঙ্গি। ওই হামলাকারীদের ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিরা ১৭ জন বিদেশি সহ ২০ জন জিম্মিকে হত্যা করে। এরপর প্রায় ১২ ঘণ্টা পর কমান্ডো অভিযান চালিয়ে পরের দিন শনিবার ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় সশস্ত্রবাহিনী। ১৩ জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করা হলেও ২০ জনের লাশ পাওয়া যায় জবাই করা অবস্থায়। নিহতদের মধ্যে নয়জন ইটালির, সাতজন জাপানি এবং একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি, যাদের মধ্যে একজনের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছিল।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জাকির নায়েক বলেন, ‘ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া (আইএস) নামটিই অনৈসলামিক। ইসলামিক স্টেট (আইএস) নামটি ব্যবহার করে আমরা আসলে ইসলামের নিন্দা করছি।’ আইএসকে ‘এন্টি ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া’ নামে অভিহিত করে আইএস নামটি ইসলামের শত্রুদের দেয়া বলেও দাবি করেন তিনি। হামলায় ২০ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘যদি কেউ দাবি করে যে সে মানুষ হত্যা করে ইসলামের পথে রয়েছে, সেটা একদমই কোরআনের পরিপন্থী কথা বলল।”
মৃত্যুর হুমকিঃ ২০১৬ সালের ১৩ জুলাই, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা সাধ্বী প্রচি জাকির নায়েকের শিরশ্ছেদ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পুরষ্কারের ঘোষণা করেছিলেন। তার আগে "হুসেনি টাইগার্স নামে একটি শিয়া গোষ্ঠী " তার মাথায়  মূল্য ১৫ লক্ষ মার্কিন ডলার ঘোষণা করেছিলো।
সম্মান ও পুরষ্কারঃ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের "২০১০ সালের ১০০ মোস্ট পাওয়ারফুল ইন্ডিয়ানস" এর তালিকায় নায়েক ৮৯ তম স্থানে ছিলেন। ২০০৯ সালের সংস্করণে তিনি ৮২ তম স্থানে ছিলেন। প্রবীণ স্বামীর মতে, নায়েক "সম্ভবত ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী সালাফি মতাদর্শী।” সানজিভ বাট্টু বলেছেন যে তিনি ইসলামের উপর কর্তৃত্ব হিসাবে স্বীকৃত, তবে অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করার জন্য তিনি পরিচিত। সদানন্দ ধূম লিখেছেন যে, ড: নায়েকের মৃদু আচার, স্যুট ও টাই পরিহিত এবং অন্যান্য ধর্মের ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি বলেই তিনি "সংযতভাবে যত্ন সহকারে রচিত চিত্র" রেখেছেন। ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২ এবং ২০১৩/২০১৪ সংস্করণে তিনি সম্মানজনক উল্লেখযোগ্য ৫০০ প্রভাবশালী মুসলমানদের বইতেও তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
¨      ২০১৩ সালে তিনি দুবাই আন্তর্জাতিক পবিত্র কোরআন পুরষ্কারের ‘ইসলামিক ব্যক্তিত্বের ২০১৩’ হিসাবে সম্মানিত হয়েছিলেন।
¨      এইচআরএইচ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুম (সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক) এই পুরস্কারটি দিয়েছিলেন।
¨      একই বছর, মালয়েশিয়ার রাজা কেদাহের এইচআরএইচ আবদুল হালিম তাকে টোকো মা'আল হিজরাহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব আন্তর্জাতিক পুরষ্কার দিয়েছিল।
¨      ২০১৪ সালে গাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ”অনারি ডকবটর অফ হিউম্যান”।
¨      ২০১৪ সালে  গাম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া জাম্মেহ এর কাছ থেকে ”ইন্সাইনিয়া অব দ্য কমান্ডার অব দ্য ন্যাশনাল অর্ডার অব দ্য রিপাবলিক অব দ্য গাম্বিয়া” গ্রহণ করেন।
¨      ২০১৫ সালে এইচআরএইচ সালমান বিন আবদুলাজিজ আল সৌদ (সৌদি আরবের বাদশাহ) তাকে কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করেছেন।
প্রকাশিত বই সমূহঃ ডা: জাকির নায়েক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তার লেখা:
২০০৭ সালে সৌদি আরবের দার-উস-সালাম পাবলিকেশন্স জাকির আব্দুল করিম নায়েকের দুটি বই প্রকাশনা করে। যার নাম ছিল, “দি কনসেপ্ট অব গড ইন মেজর রিলেজিউন” এবং “দি কুরআন এন্ড মর্ডান সায়েন্স: কম্প্যাটিবল অর ইনকমপেটিবল”। তাঁর উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা পরবর্তীতে মূল ইংরেজি সহ একাধিক ভাষায় বই হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো:-
¨      ইসলাম বিষয়ে অমুসলিমদের কিছু সাধারণ প্রশ্নের জবাব
¨      কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞান
¨      কোরআন কি ঈশ্বরের বাণী?
¨      আমিষ খাদ্য কি মানুষের পক্ষে ক্ষতিকর?
¨      বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ
¨      প্রধান প্রধান ধর্মে ঈশ্বরের অস্তিত্ব
¨      বিজ্ঞানের আলোকে কোর'আন ও বাইবেল
¨      হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের অন্তরনিহিত সাদৃশ্য
¨       সন্ত্রাসবাদ ও জিহাদ
¨      ইদলামের কেন্দ্রবিন্দু
¨      সন্ত্রাসবাদ কি কেবল মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?
¨      প্রশ্নোত্তোরে ইসলামে নারীর অধিকার
¨      কেন ইসলাম গ্রহণ করছে পশ্চিমারা?
¨      ইসলামে নারীর অধিকার আধুনিক নাকি সেকেলে?
¨      সুদমুক্ত অর্থনীতি
¨      ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের সাদৃশ্য
¨      বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ সমুহের আলোকে হিন্দুধর্ম ও ইসলাম
¨      আলকোর'আন বুঝে পড়া উচিত
¨      রসুলুল্লাহর নামাজ(সালাত)
¨      চাঁদ ও কোরআন
¨      মিডিয়া ও ইসলাম
¨      সুন্নত ও বিজ্ঞান
¨      পোশাকের নিয়মাবলী
¨      বাংলার তাসলিমা
গত ২০ বছরে (২০১৫ সালের মধ্যে) ড: জাকির নায়েক আছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০০ টিরও বেশি জন বক্তৃতা দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ । কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, মিশর, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, বোতসোয়ানা, নাইজেরিয়া, ঘানা, গাম্বিয়া, মরোক্কো, আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, থাইল্যান্ড, হংকং, চীন, গিয়ানা (দক্ষিণ আমেরিকা), ত্রিনিদাদ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এবং অন্যান্য অনেক দেশ ছাড়াও ভারতে বিভিন্ন প্রদেশ ও অঙ্গরাজ্যে আলোচনা করেছেন।


তথ্যসূত্রঃ
peoplepill.com/people/zakir-naik/
peacetv.tv/en-gb/speakers/dr-zakir-naik
ইউটিউবে প্রচারিত বিভিন্ন লেকচার এবং
উইকিপিডিয়া।
Share on Google Plus

0 comments:

Post a Comment