কে এই হিরো আলম? কেমন ছিল তার অতীত জীবন?
হিরো আলম, যার প্রকৃত নাম আশরাফুল
আলম সাঈদ। ১৯৮৫ সালের ২০ জানুয়ারী বগুড়া জেলার এরুলীয়া ইউনিয়নের এরুলীয়া গ্রামে অত্যান্ত
দরিদ্র একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক এবং মায়ের নাম আশরাফুন
বেগম।
তার পরিবার আর্থিকভাবে এতটাই
অসচ্ছল ও দরিদ্র ছিল যে, তিনি সপ্তম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। পরবিারের খরচ
চালানোর জন্য ছোট বেলা থেকেই আয়-রোজগারের পথে পা বাড়াতে হয়। পরিবার নিয়ে একটু ভাল ভাবে
বেঁচে থাকার জন্য, সমাজরে অনেকের কাছে গিয়েছিলেন কিন্তু কোন সাহায্য পাননি। এমনকি কোন
আত্নীয়-স্বজনও তাকে কোন প্রকার সাহায্য করেনি। তিন বেলা খেতে পারতেন না, কোন রকম এক
বেলা খেয়ে জীবন পার করতেন।
অভাব অনটন চরম দুর্দশায় চলতে
থাকে তাদের পরিবার। তার বাবার সাথেও সম্পর্ক ভালো ছিল না। সব সময় বকা-ঝকা করতো। তার
মা কে অত্যাচার করতো। হঠাৎ একদিন রাত ৩.০০ টায় তাকে ও তার মাকে ঘর থেকে বের করে দেন।
মাকে নিয়ে অথৈই সাগরে ভাসছেন। কিন্তু এক মূর্হুতের জন্যও ভেঙ্গে পড়েননি তিনি। নিজেকে
বুঝাতেন, যা করার নিজেকেই করতে হবে, কেউ কিছু করে দিবে না। আব্দুর রাজ্জাক নামে একজন
তাকে সন্তান হিসেবে আশ্রয় দেন। এরপর গ্রামের পথে পথে, মেলায়, স্কুলের সামনে আচায় বিক্রি
শুরু করেন। এভাবেই চলতে থাকে হিরো আলমের শৈশবের দিনগুলি।
আচার ব্যবসা ছেড়ে সিনেমা ও
গানের সিডির ব্যবসা শুরু করেন। দিন দিন সিডি ব্যবসার রোজগার ভাল হচ্ছিল। এরপর নিজ গ্রামেই
শুরু করেন ডিস টিভি সংযোগের ব্যবসা। সিডির ব্যবসা করার সময় অদ্ভূদ একটা ইচ্ছা জাগে
মনে। ভিডিওতে যখন নায়ক ও মডেলদের দেখতেন, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মডেলিং করার ও সিনেমার
নায়ক হওয়ার । কিন্তু টাকার অভাবে কিছু করতে পারেননি।
ক্যাবল অপেরাটর ব্যবসা শুরু
করার পর, মোটামুটি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হতে থাকেন তিনি। মডেলিং ও অভিনয়ের জন্য নিজের
টাকা খরচ করে একটা গ্রুপ তৈরি করেন। জনপ্রিয় রোমান্টিক গানের কপি ভিডিও, মজাদার মিউজিক
ভিডিও তৈরি করেন। নিজের তৈরি মিউজিক ভিডিওতে নিজেই মডেল, নিজেই নায়ক। ভিডিওগুলি ফেসবুক
ও ইউটিউবে ছড়িয়ে দেন। রাতারাতি ভাইরাল হতে থাকে ভার্চ্যুয়াল জগতে। এভাবে, আশরাফুল আলম
সাঈদ থেকে হয়ে ওঠেন আজকের ‘‘হিরো আলম’’।
১১ আগস্ট‘২০১৭
ইং তারিখে হিরো আলমের অভিনীত প্রথম ছবি “মার ছক্কা” মুক্তি পায়। এছাড়া ২০১৮ ইং সালে
“বিজু দ্যা হিরো” নামে বলিউডের একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।
ভারতীয় বিভিন্ন
আর্ন্তজাতিক সংবাদমাধ্যম, জি নিউজ, ডেইলি ভাস্কর, বিসিবি হিন্দি ও মিড-ডে তাকে নিয়ে
প্রতিবেদন প্রচার করে। ইয়াহুর জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময়ে ভারতীয় মানুষ সালমান খানের
চেয়েও ইন্টারনেটে হিরো আলমকে বেশি সার্চ করেছেন। এছাড়া তিনি, ২০১৮ সালে গুগল সার্চ
ইঞ্জিনে, সার্চের দিক থেকে বাংলাদেশে ১০তম অবস্থানে রয়েছেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ইং অনুষ্ঠিত
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, বগুড়া-৪ আসন থেকে সিংহ মার্কায় সতস্ত্র প্রার্থী হিসেবে
সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করে তিনি দেশের শিক্ষিত ও বুদ্ধিজীবি মহল থেকে শুরু করে দেশের
সর্ব স্তরের মানুষের কাছে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। হিরো আলম বাংলাদেশের রাজনীতিতে
একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। কারণ, নির্বাচনের প্রথম দিন থেকেই তিনি আলোচনা আসেন। অনেক
মিডিয়া তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ ঠাট্টা করতে চেয়েছিল কিন্তু তিনি ছিলেন স্বাভাবিক এবং নিজের
প্রতি প্রচন্ড আত্নবিশ্বাসী। নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি ছিলেন অবিচল। রাজনীতির
বিষয়ে, বিভিন্ন টকশোতে তার কথা ছিল যুক্তিযুক্ত কিন্তু তীক্ষ্ণ ও সহজ-সরল।
আশরাফুল আলম সাঈদ ওরফে হিরো
আলম ২০০৯ সালে পাশের গ্রামের সাবিহা আক্তার সুমি সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে
তিনি, আখিঁ ও আলো নামে দুই মেয়ে এবং আবির নামে এক ছেলের জনক।
“একুশে বইমেলা”
২০১৯ইং এ হিরো আলম, তার জীবনী নিয়ে প্রথমবারের মত ‘দৃষ্টিভঙ্গি বদলান আমরা সমাজকে বদলে
দেবো’ নামে একটি বই বের করেন। বইটি মুলত পুরোপুরি আত্নজীবনীমূলক নয়, বইটা অনেকাংশে
অনুপ্রেরণা ও উদ্দীপনামূলক।
বই সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার
বইটি কেউ কিনবে, নাকি কিনবে না এটা বড় কথা নয়, তবে আমি সকলকে অনুরোধ করবো বইটি একবার
হলেও পড়া উচিত। বইটি না কিনলেও অন্তত খুলে দেখবেন।
হিরো আলমকে আমরা
অনেকেই ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না বা জানি না। তার জীবন কতটা কষ্টের মধ্যে দিয়ে গেছে এবং
কতটুকু পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি আজকের ‘হিরো আলম’ হয়েছেন এটা হয়ত তিনিই জানেন। তিনি
প্রমান করেছেন যে, সফল হতে চাইলে দৈহিক সৌন্দর্য ও বাপের সম্পত্তি থাকা আবশ্যিক নয়,
দৃঢ় ইচ্ছা ও নিজের প্রতি আত্নবিশ্বাস সবার আগে থাকতে হয়। সুতরাং আসুন তাকে নিয়ে হাঁসি
ঠাট্টা ও বাজে ট্রল না করে তার কষ্টের অধ্যায়টুকু জেনে, নিজেরা শিক্ষা নেই। মনে রাথা
উচিত, “চাইলেই সবাই কষ্ট করতে পারে কিন্তু সফল হতে পারে না।”
Nice
ReplyDeletethank u....
Delete