RECENT COMMENTS

ভিক্ষুক সমাচার

সকাল বেলা অফিসে যাওযার জন্য ঘর থেকে বের হলে অথবা অফিস থেকে ঘরে ফেরার সময আমাদের চোঁখের সামনে যে জিনিসটা পড়ে তা হলো ভিক্ষুক। দলে দলে, পরিবার নিয়ে ভিক্ষা করাটা আমাদের শহরের একটি কমন চিত্র। কারো চোঁখ নাই, কারো হাত নাই, কারো পা নাই। কারো কারো হাত ও পা কোনটাই নাই। মাঝ মাঝে ভয়ঙ্কর চেহারার ভিক্ষুকও দেখা যায় শহরের রাস্তায রাস্তায়। শুনতে খারাপ লাগলেও সত্য যে, দৃশ্যগুলি চোঁখে দেখার মত নয়। সব বির্ভষ দৃশ্য। সমস্যটিা শুথু শহরের মধ্যে নয় গ্রামেও বেড়ে চলছে ভিক্ষুকের সংখ্যা।



একজন ভিক্ষুক যখন কারো কাছে ভিক্ষা চায় তখন সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে নিজের অসহায়ত্ব ফুটিয়ে তোলার। যে ভিক্ষা দেয় তার ভিতরও একটি আবেগ সৃষ্টি হয়। ধর্মীয় ও মানবতার দিক ভেবে সবাই দান করে কিন্তু বর্তমানে ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াতে প্রকৃত অসহায় কে তা বুঝা কঠিন। ফলে মানুষের কাছে ভিক্ষুক দিন দিন বিরক্তকর ও বড় সমস্যার কারন হযে দাড়িয়েছে। সমকালীন আধুনিক যুগে আমরা যখন বাংলাদেশকে একটি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে দেখতে চাচ্ছি তখন ভিক্ষুক আমাদের জন্য বড় একটি বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
পরিপূর্ণ ভাবে মধ্য আয়েরে দেশে রুপান্তিরত হওয়ার জন্য আমাদের কয়েকটি বড় সমস্যার দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। তার মধ্যে ভিক্ষুক অন্যতম একটি বড় সমস্যা। সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ ভিক্ষুক রয়েছে। এদের মধ্যে শুধু ঢাকা শহরে রয়েছে প্রায় ১ লক্ষ। এছাড়া রোজা, শবে বরাত, শবে কদর ও কোরবানীর সময় আরো ৫০ হাজারের মত ভিক্ষুক। এদের বলে মৌসুমী ভিক্ষুক। এরা বেশির ভাগই নিন্ম মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মৌসুমী ভিক্ষুকের সংখ্যা ৫০ হাজারেরও অনেক বেশি। সমগ্র দেশে প্রায় ১২ লক্ষেরও বেশি ভিক্ষুক রয়েছে। ঢাকার শহরে রয়েছে প্রায় ৩ লক্ষেরও বেশি। আশ্চর্য বিষয় হলেও সত্য যে, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে প্রায় ৪০ হাজারের মত ভিক্ষুক ছিল কিন্তু বর্তমানে এর সংখ্যা বহুগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন দিন কেন ভিক্ষুকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে তার কারন আমরা সবাই কম বেশি জানি। আমি সেসব কারনে যাবো না।
হঠাৎ করে দেশের শতভাগ ভিক্ষুক নির্মূলে সম্ভব নয়। ঢাকা শহরের রাস্তা থেকে পুরোপুরি ভিক্ষুক মুক্ত করা আকাশকুসুম কল্পনা। যদিও ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম শহরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সাল থেকে ভিক্ষুক নিরষনে কাজ করে আসছে। বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে “একটি বাড়ি, একটি খামার” নামে প্রোগ্রামটি অন্যতম। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে,  প্রকল্পোটি ইতোমধ্যে নিলফামারী উপজেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কাজ করা হয়েছে এবং বর্তমানে এই অঞ্চলটি ভিক্ষুক মুক্ত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছেন, যদি প্রকল্পোটি এভাবে চলে তাহলে এর মেয়াদ আগামী ২০২০ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হবে। আমরা আশা করবো প্রকল্পোটি যাতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার প্যাঁচে না পড়ে এবং ভিক্ষুক পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্তে এটি সফলতার সাথে চলতে থাকবে। কিছু নরপশু সিন্ডিকেট তৈরি করে ভিক্ষুক নয় এমন কিছু দরিদ্র মানুষকে দিয়ে জোর করে ভিক্ষা করাতে বাধ্য করে। অঙ্গহানি করে, নারী ও বাচ্চা শিশুদের দিয়ে রমরমা ভিক্ষা ব্যবসা করে এসব নরপশুরা। প্রশাসনের উচিত যত দ্রুত এদের আইনের আওয়াতায় এনে কঠিন শাস্তি দেয়া।
ভিক্ষুক নির্মূলে সরকারি কার্যক্রমের পাশাপাশি সাধারন মানুষেরও এগিয়ে আসা উচিত। সমাজের স্থানীয় সচ্ছল ও বিত্তবান মানুষের উচিত নিজ নিজ এলাকার দরিদ্র মানুষদের মাঝে সঠিক নিয়মে দান, ছদগা, যাকাত প্রদান করা। এমনো ভিক্ষুক আছে যাদের ভিক্ষা করার প্রয়োজন নাই তবুও এরা ভিক্ষা করে। ভিক্ষাবৃত্তি একটি হীন পেশা এবং লজ্জ্বাজনক কাজ এটা উপলব্ধী করিয়ে দেয়া। প্রয়োজনে সামাজিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করা উচিত। আমারা যে যার অবস্থান থেকে তাদের জন্য যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নাও করতে পারি নূণ্যতম তাদের কে সচেতন করা আমাদের সবার কর্তব্য। আমারা আশা করবো আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভিক্ষুকমুক্ত একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবো।

Share on Google Plus

0 comments:

Post a Comment