ধরার
বুকে পা রেখে চিৎকার করে ওঠে মানবশিশু। আধ্যাত্বিক জগৎ থেকে পার্থিব জগতে এসে বিস্ময়ভরা
চোঁখে অবলোকন করে চারিদিকের পরিবেশ। কিছু বুঝে ওঠার আগে চোঁখ বুঝে আবার কাঁদতে থাকে-
একে বলে মানবশিশু। ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করে, কথা বলতে শুরু, নিজেকে মেলে ধরে প্রজাপতির
মত। ভাব আদান-প্রদান করে গড়ে তোলে নিজের জগত। এভাবে বড় হতে থাকে মানবশিশু। একটা সময়
ভালো কাজ করলে আমরা বলি মানুষের বাচ্চা! খারাপ কাজ করলে বলি জানোয়ারের বাচ্চা! মানুষের
আকৃতি হয়েও জানোয়ার শুনতে হয়- একমাত্র কর্মের কারণে। ছাগলের পেট থেকে বের হলে ছাগলের
বাচ্চা, গরুর পেট থেকে বের হলে গরুর বাচ্চা, বিড়ালের পেট থেকে বের হলে বিড়ালের বাচ্চা
কিন্তু মানুষের পেট থেকে বেরুলেই মানুষের বাচ্চা হওয়া যায় না! মানুষের বাচ্চা হতে হলে
ভালো কর্মগুণ থাকতে হয়।
মানুষের
বাচ্চাকে যত্ন করে সু-শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। আর মানুষের
মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আদর্শ সময় হলো মানব শিশুকাল। এই শিশুকালকে আমরা ১ থেকে
৭ বছর পর্যন্ত ধরে নিতে পারি। ৮ থেকে ১৮ পর্যন্ত বয়সকে শৈশবকাল বা বাল্যকাল বলা হয়।
আমার এখন শিশুদের সাথে আমাদের করণীয় কিছু সাইকোলজিক্যাল কাজ নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলো
শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
1.
খাওয়ার
সময় মিথ্যা কথা না বলাঃ অনেক মায়েরা শিশুদেরকে খাওয়ানোর সময় মিথ্যার আশ্রয় নেয়। যেমন,
“এক মুষ্ঠি ভাত হাতে নিয়ে শিশুকে আনন্দ দেয়ার জন্য বলে ঐযে ভাত কাক নিয়ে গেছে! শিশুটি
বিস্ময়ভরা চোঁখে আশেপাশে কোথাও কাক খুঁজে পায় না। এরপর পিছন থেকে হাত সামনে এনে মুষ্ঠিভর্তি
ভাত দেখিয়ে বলে এরপর না খেলে সত্যি সত্যি কাকে ভাত নিয়ে যাবে”।
Ø
কখনোই
এমনটা করবেন না। ঘটনাটি শিশুর কোমল মনে অবচেতনভাবে গেঁথে থাকে। ভবিষ্যতে ওরা ধরে নেয়
মিথ্যা বলাটা সহজ বিষয় দোষের কিছু নয়। আপনি যখন মিথ্যা বলার জন্য শাষন করবেন তখন ওরা
বুঝতে চাইবে না মিথ্যে বলাটা অন্যায়, কারণ বাস্তবে আপনি তাকে শিখিয়েছেন মিথ্যা বলা
অন্যায় নয়।
2.
প্রকৃতির
কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দেয়াঃ আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, আপনার ছোট শিশুটি হামাগুড়ি
দিয়ে বা কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে আগুনের কাছে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আপনি তাকে থামাবেন না,
যতক্ষণ না সে আগুনে স্পর্শ করে। অবশ্যই চোঁখ রাখুন তার উপর যাতে ওর কোন ক্ষতি না হয়
এবং ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন আগুনের তাপে সে দূরে সরে আসে কিনা।
Ø
এর
মাধ্যমে আগুন ছোয়ালে পুড়বে, জলে হাত দিলে ভিজবে- এটা সে প্রকৃতি থেকেই জানতে পারবে।
প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ দিন। তাহলে ভবিষ্যতে আপনার শিশু প্রকৃতির
যে কোন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে কারণ ব্যাখ্যা করতে পারবে।
3.
কোন
কিছু চাওয়া মাত্রই সাথে সাথে না দেয়াঃ প্রত্যেক পিতা-মাতাই তাদের সন্তানকে অকৃত্রিম
ভালোবাসে। কেউ চায় না তাদের সন্তান চোঁখের সামনে কান্না করুক, কষ্ট পাক। ধরুন, আপনার
শিশু কোন কিছুর জন্য কান্না শুরু করলো। কান্নার সাথে সাথে সেই জিনিসটি দিবেন না। যদি
মনে করেন, এতে আপনার শিশু কষ্ট পাচ্ছে, মানসিক বিকাশে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে তাহলে আপনার
আবেগ কন্ট্রোলে রাখুন। মনে রাখবেন, বিজ্ঞান সবসময় মানবকল্যান বয়ে আনে না।
Ø
কান্না
করার সাথে সাথে সন্তান সব কিছু পেয়ে গেলে সে কখনোই ধৈর্য শিখবে না। কান্না করলেও একটু
বুঝিয়ে রাখুন, স্বান্তনা দিন। অতঃপর কিছু দিন পর বা কিছুক্ষণ পর তার কাঙ্খিত জিনিসটি
দিন। এতে সে ধৈর্য ধরা শিখবে, ধৈর্যের অভ্যাস গড়ে উঠবে।
4.
পরিবারে
ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলুনঃ আপনার সন্তান আপনার কথায় যতটা না শিখবে তার চেয়ে আপনার
কাজের মাধ্যমে বেশি শিখবে।
Ø
সুতরাং
ঘরে প্রার্থনা করুন। সন্তান একটু বড় হলে আপনার সাথে ধর্মীয় উপাসানলায়ে নিয়ে যান। পরিবারের
মধ্যে আপনাদের প্রার্থনা দেখে সে ধর্মীয়ভাব রীাতনীতি শিখবে।
5.
“না”
শব্দটি বলা পরহিার করুনঃ আপনার ছেলে দুপুর রৌদ্দে মাঠে খেলতে যাওয়ার জন্য কান্না করছে-
এমতাবস্থায় রৌদ্দে খেললে শরীর খারাপ করবে, কালো হয়ে যাবে বিভিন্ন উপদেশ বাণী শোনাবনে
না। বরং আপানি তাকে বলতে পারেন- “এখন ঘুমানোর সময়। আমরা বিকেলে খেলতে যাবে”। এভাবে
প্রতিটি ’না যুক্ত বাক্য’ আপনি ’হ্যাঁ যুক্ত বাক্যে’ পরিনিত করে বলবেন।
Ø
শিশু
যতো না সূচক শব্দ শুনবে ততোই তার মেজাজ রুক্ষ হবে এবং আচরণ উগ্র হবে। আর যতো হ্যাঁ
সূচক কথা শুনবে ততোই সে মানুষ ও সমাজ সম্পর্কে পজিটিভ ধারণা অর্জন করবে এবং ব্যক্তিত্ব্যবান
হিসেবে গড়ে উঠবে।
6.
শিশু
হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে গেলে বেশি তার সামনে বেশি সহানুভূতি প্রকাশ করবেন নাঃ প্রত্যেক
পিতা-মাতাই তাদের সন্তানকে অকৃত্রিম ভালোবাসে। কেউ চায় না তাদের সন্তান চোঁখের সামনে
কান্না করুক, কষ্ট পাক। কিন্তু আপনার শিশু হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ পড়ে গেলে আপনি দৌড়ে গিয়ে
কোলে নিয়ে চুমো খাচ্ছেন তার ব্যাথায় কাতর হয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে গেছেন এটা শিশুদের জন্য
ক্ষতিকর। লক্ষ করুণ শিশুরা পড়ে গেলে তার নিকটে যে থাকে তার দিকে তাকায়, তার অনুভূতি
বোঝার চেষ্টা করে। যদি ব্যাক্তিটি শিশুর দিকে তাকিয়ে আহারে! বলে মন খারাপ প্রকাশ করে
তাহলে শিশুটিও কান্না করে। আর যদি কেউ বলে সাবাস! উঠো কিচ্ছু হয়নি! লক্ষ করুন সেও হাঁসতে
শুরু করে (যদি বড় ধরণের কোন ব্যাথা বা ক্ষতি না হয়)।
Ø
এতে
শিশুরা নিজের কাজ নিজে করার সাহস পাবে। নিজের কাজের প্রতি আত্নবিশ্বাসী হয়ে উঠবে।
7.
শিশুর
সামনে অন্যের প্রশংসা করুনঃ যতটা সম্ভব শিশুদের সামনে অন্য মানুষের ভালো প্রশংসা করুন।
কিন্তু ভুলেও মিথ্যা প্রশংসা করবেন না।
Ø
শিশু
যখন বুঝতে শিখবে তখন আপনার প্রতি তার শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে যাবে। আপনার আদর্শ তাকে প্রভাবিত
করবে। কিন্তু মিথ্যা প্রশংসা করলে বড় হয়ে আপনার শিশু চাটুকার ও তোষামদি হয়ে উঠবে।
8.
অন্য
ছেলে/মেয়েদের সাথে তুলনা করবেন নাঃ আমাদের পিতামাতার একটা বাজে স্বভাব হলো চট করে অন্য
ছেলে/মেয়ের সাথে নিজের সন্তানের তুলনা করে ফেলে। সন্তান যদি কোন কিছু অর্জনে ব্যর্থ
হয় বা আপনার কথা না শোনে তাহলে তাকে অন্যভাবে বোঝান কিন্তু ভুলেও অন্য ছেলে/মেয়ের সাথে
তুলনা করবেন না।
Ø
অন্য
ছেলে/মেয়ের সাথে তুলনা করেলে আপনার সন্তান দূর্বল মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। সে সবসময়
হীনমন্নতায় ভুগবে এবং দৃঢ় মানসিক শক্তি অর্জন করতে পারবে না।
লেখা- শরশ দিগন্ত
0 comments:
Post a Comment