প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ হলো উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে ৫+ বয়সী শিশুদের সার্বিক বিকাশে সহায়তা করা। যথাযথ পাঠ পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্যকর শিখন শিখানো পদ্ধতি ও কৌশল পরিচালনা করলে শিশুরা শিখনফলগুলো দ্রুত অর্জন করতে পারে। আর পাঠ পরিকল্পনারই একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মূল্যায়ন- যার দ্বারা শিশু নির্ধারিত শিখনফল অর্জন করেছে কিনা তা যাচাই করা হয় অথ্যাৎ শিশুর শিখন অগ্রগতি পরিমাপ করা হয়।
প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীর শিখনফলগুলো অর্জন করার জন্য পরিকল্পিত কাজ, শিখন-শেখানো কৌশল, মূল্যায়ন কৌশল ও পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছে। শিখনফল অর্জন নিশ্চিত করার জন্য মূল্যায়ন কৌশল ও পদ্ধতি অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ আমরা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন কৌশল ও পদ্ধতি সম্পর্কে জানবো।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন কৌশল ও
পদ্ধতিঃ প্রাক-প্রাথমিক
শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন কৌশলগত দিক থেকে ২টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
1.
গাঠনিক
(Formative) মূল্যায়ন ও
2.
সামষ্টিক
(Summative) মূল্যায়ন।
প্রাক-প্রাথমিক
স্তরে গাঠনিক ও সামষ্টিক উভয় কৌশলই নমনীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়। প্রতিনয়িত শিক্ষার্থীদের
এই মূল্যায়নের আওতায় রাখতে হবে এবং প্রত্যাশিত শিখন অগ্রগতি যাচাই করতে হবে। এক্ষেত্রে
মূল্যায়নের কিছু তথ্য সংরক্ষণ করা জরুরি যা শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট
ধারণা দেবে।
এক্ষেত্রে
মূল্যায়ন ২ ভাবে হতে পারে। যথা-
1.
আনানুষ্ঠানিক
মূল্যায়ন এবং
2.
ধারাবাহিক মূল্যায়ন
অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়নঃ শিখনক্রমে উল্লিখিত শিখনফলগুলো অর্জিত হচ্ছে কি না তা প্রতিনিয়ত যাচাই করা প্রয়োজন। শিক্ষক নিজস্ব সামার্থ ও কৌশল এবং সহায়িকা ব্যবহার করে পাঠ চলাকালীন বা পাঠ শেষে শিশুদের শিখন অগ্রগতি মূল্যায়ন করবেন এবং সে অনুযায়ী ফলাবর্তন Feedback) প্রদান করবেন। এ ধরনের মূল্যায়ন সংরক্ষণ করার প্রয়োজন নেই শিক্ষক তার ধারণা ও বিচারবোধ থেকে শিশুর অগ্রগতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।
ধারাবাহিক মূল্যায়নঃ ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিশুর শিখন অগ্রগতি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কতগুলো সুনির্দিষ্ট সূচকের আলোকে মূল্যায়ন টুল তৈরি করে মূল্যায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে। ধারাবাহিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারেঃ
v পর্যবেক্ষণঃ প্রাক-প্রাথমিক স্তরে মূল্যায়নের সবচেয়ে উপযোগী কৌশল হলো পর্যবেক্ষণ। এই স্তরে শিশুরা শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন ধরণের কাজরে মাধ্যমে শিখনফল অর্জনের চেষ্টা করে, যেগুলো অনেক সময় মৌখিক বা লিখিত কোন ভাবেই যাচাই করা যায় না, এক্ষেত্রে শিক্ষক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে শিশুর শিখন অগ্রগতি যাচাই করতে পারেন। প্রতি মূহুর্তে শিক্ষক শিখনফলগুলো অর্জনে তাঁর পর্যবেক্ষণকে কাজ লাগাবেন এবং শিশুর শিখন-স্তর এবং শারীরিক ও মানসিক সামর্থ যাচাই করবেন। পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যবেক্ষণ ছক প্রণয়ন করতে হবে।
v মৌখিকঃ কিছু শিখন যোগ্যতা আছে যেগুলো লিখিতভাবে মূল্যায়ন করা যায় না, যেমন, ছড়া, আবৃত্তি, মুকাভিনয়, গান ইত্যাদি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন। এধরণের কাজগুলো শিক্ষক মৌখিকভাবে মূল্যায়ন করবেন। এক্ষেত্রে সঠিক উত্তর দেয়, শূন্যস্থান, স্পষ্টতা, শুদ্ধ উচ্চারণ, শ্রবণযোগ্যতা, বোধগম্যতা, আত্নবিশ্বাস ইত্যাদি সূচক বিবেচনায় রাখা যেতে পারে।
v লিখিতঃ কিছু লিখন যোগ্যতা রয়েছে যেগুলো মৌখিকভাবে মূল্যায়ন করা যায় না, যেমন ছবি আঁকা, আঁকিবুকি আঁকা, বর্ণ বা শব্দ লিখতে পারা ইত্যাদি। এগুলো লিখিতভাবে যাচাই করতে হবে। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সংশ্লিষ্ট কাজটির স্পষ্টতা, পরিচ্ছন্নতা ও বোধগম্যতা ঠিক রাখা।
v পোর্টফোলিওঃ পোর্টফোলিও হলো বিভিন্ন সময় শিশু যেসব কাজ বা জিনিস তৈরি করে তা সংগ্রহ করে রাখা। এর মাধ্যমে শিশুদের থারাবাহিকভাবে শিখনে অগ্রগতি যাচাই করা যায়।
v এসাইনমেন্টঃ কিছু কিছু শিখনফল অর্জনের জন্য শিশুদের এসাইনমেন্ট প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে শিক্ষাক্রম ম্যাট্রিক্স এ উল্লিখিত ৭.১.১ থেকে ৭.১.৩ নং পর্যন্ত শিক্ষনফলগুলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে। এসাইনমেন্ট প্রদানের মাধ্যমে শিশুর শিখন অভিজ্ঞতা অর্জন ও শিখন অগ্রগতি সহজে যাচাই করা যায়।
প্রাক-প্রাথমিক স্তরে একজন শিক্ষকই প্রতিদিনের সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন। শিক্ষক শ্রেণির প্রতিটি শিশুর সম্পর্কে যথাযথ ধারণা পোষণ করবেন। শিশুর অবস্থা সম্পর্কে তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। এজন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়টি সহজ করা হয়েছে।
v মূল্যায়ন ছকে ৮টি শিখনক্ষেত্রের জন্য ১৫টি মূল্যায়ন সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো ধারাবাহিকভাবে সারা বছর মূল্যায়ন করা হয়। হাজিরা রেজিস্টার ছকে প্রতি মাসের মূল্যায়ন রেকর্ড রাখা হয়।
v কিছু সূচক আছে যেগুলো প্রতি মাসে মূল্যায়ন করা সম্ভব না। যেসন, পড়া, লেখা, গাণিতিক দক্ষতা ইত্যাদি। এই ধরণের সূচকগুলো যে মাসে পড়ানো হবে সেই মাসেই মূল্যায়ন করতে হবে।
v
প্রতিটি
মূল্যায়নের বিপরীতে শিশুদের মূল্যায়ন করা হয় ৩ স্কেলে-
I.
ভালো
II.
মোটামুটি
এবং
III.
উন্নতি
প্রয়োজন
v প্রতিটি শিশুর প্রতিটি কাজ নিবড়িভাবে পর্যবেক্ষণ করে মাসিক একটি মূল্যায়ন ছক পূরণ করতে হবে।
v প্রতি চার মাস পরপর অথ্যাৎ বছরে তিনবার (এপ্রিল মাসে প্রথমবার, আগস্ট মাসে দ্বিতীয়বার ডিসেম্বর মাসে শেষবার) রেকর্ডকৃত মাসিক মূল্যায়ন ছকের স্কেল বিশ্লেষন করা হয়। প্রতিটি শিশুর অগ্রগতি সম্পর্কে একটি সার্বিক এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে মন্তব্যসহ মূল্যায়ন ছকের নির্দিষ্ট স্থানে টিক দিয়ে রাখা হয়।
যেহেতু
প্রত্যেক শিশুই সবগুলো যোগ্যতা অর্জন করবে এমন প্রত্যাশা করা হয়েছে, সেহেতু প্রত্যেক
শিশুকেই এককভাবে (One to One Approach) মূল্যায়ন করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
-
শিক্ষক
সহায়িকা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ।
0 comments:
Post a Comment