RECENT COMMENTS

“মোবারক আলীর ছেলে আজ নিরাপদে বাসায় ফিরেছে ”


"অভদ্র!"

মোবারক আলী আজ হাঁপাতে হাঁপাতে বাসায় ফিরেছেন। উনি কখনো এক বারের বেশি কলিং বেল বাজায় না কিন্তু আজ দরজা খোলা না হওয়া পর্যন্ত বাঁজাতে লাগলেন। কাজের বুয়া বিরক্ত হয়ে মনে মনে ‘বেটাবুইড়া আচো***’ বলে গালি দিলেন। এই মুহূর্তে বুয়ার চেয়ে মোবারক আলী বেশি বিরক্ত। বিরবির করে বলছেন,
- ড্রাইভারা এমন জানোয়ারের মত গাড়ি চালায়!
কিছু যাত্রী এমন চিৎকার চেঁচামেচি করে যে, বনের জানোয়ারকেও হার মানায়!
জিনাত আলী, মোবারক আলীর স্ত্রী এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত এগিয়ে দিয়ে বললেন,
কি হয়েছে?
- আর বলো না- "ফার্মগেটে দুটি গাড়ি কে কার আগে যাবে এই প্রতিযোগিতা করতে যেয়ে দুই বাসের মাঝের চিপায় পড়ে তিতুমীর কলেজের এক ছাত্রের ডান হাত পুরোটা থেতলে গেছে!" প্রথমে যাত্রীরা কিছু বলেনি। সবাই যার যার বাসায় যাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল। মনে মনে ভাবছিলাম, কোন ঝামেলা ছাড়াই যেন বাসায় ফিরতে পারি। কিন্তু ছেলেটি যখন চাপা খেলো তখনই শুরু হলো ঝামেলা। এজন্য বাসায় ফিরতেও দেরি হলো।
- জিনাত আলী টেলিভিশনের গ্লাসটি পুরো পরিস্কার করতে পারলেন না- তার আগেই কাঁপতে কাঁপতে সোফায় বসে পড়লেন। তার দুই চোঁখ বেয়ে পানি ঝড়তে লাগলো।
- তুমি কি করছিলে বাসের ভিতর? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে তিনি কথা বলতে লাগলেন। কোন সুস্থ বিবেকবান মানুষ কি ছিল না? গাড়ি দুটি প্রতিযোগিতা করার সময়ই কেন তোমরা জানোয়ারের মত চিৎকার করোনি? বেপরোয়া গাড়ি চালানোর জন্য কেন ড্রাইভারকে শাসাও নি? কোন কিছু ক্ষতি হওয়ার আগে কেন তোমরা প্রতিবাদ করো নি? ওহ্! তোমরা তো ভদ্র মানুষ! অন্যায়ের প্রতিবাদের জন্য জোরে কথা বলাটা তোমাদের কাছে অভদ্র বলে মনে হয়, তাই না? কি হবে এখন নিয়মের কথা বলে? ছেলেটির হাত ফিরিয়ে দিতে পারবে? এখন তোমরা পারবে আফসোসের সুরে মানুষের কাছে গল্প করতে। জিনাত আলী আর কথা বলতে পারলেন না। সোফার উপর শুয়ে পড়লেন। তা দেখে বুয়া খালাম্মা বলে চিৎকার দিয়ে কাছে আসলেন। জিনাত আলী ইশারায় বুয়াকে ইনহিলারের ইঙ্গিত করলেন।
- গিজার দিয়ে ঠান্ডা পানি বেরুচ্ছে। বর্তমানের বড় লোকেরা গোসল করে না, সাওয়ার নেয়। মোবারক আলীও শান্ত মেঝাঝে সাওয়ার নিচ্ছেন। ঝরণার নিচে দাঁড়িয়ে রইলেন পনেরো মিনিটের মত। শরীরের ক্লান্তি ও মনের বিরক্তি টা কেঁটে গেছে। এই মুহূর্ত তিনি মনে মনে ভাবছেন- "উহ্! বড় বাঁচা বেঁচে গেছি, আমার ছেলেটি আজ নিরাপদে বাসায় ফিরেছে।"
গত ৩ এপ্রিল ঢাকার কারওয়ান বাজারে দুই বাসের রেষারেষির মধ্যে পড়ে একটি হাত হারান তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব। ওই ঘটনায় তিনি মাথায়ও আঘাত পান এবং মস্তিষ্কে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে গত ১৬ এপ্রিল রাত পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

শরশ_দিগন্ত
Share on Google Plus

0 comments:

Post a Comment