RECENT COMMENTS

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল- বাংলাদেশে

“ইফতারির আগে বিশেষ মোনাজাতরত”

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার নলতা গ্রামে। এটি পবিত্র কাবা শরিফের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার জামায়াত হিসেবে পরিচিত। ১৯৩৫ সালে, উপমহাদেশের প্রখ্যাত সমাজ সংস্কারক, সূফী দার্শনিক, ইসলামিক ব্যক্তিত্ত্ব হযরত থানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (র.) এ ইফতার মাহফিল শুরু করেন।
হযরত খানবাহাদুর আহ্ছাউল্লাহ (র.)

১৮৭৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার নলতা গ্রামে থানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (র.) জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮৫ সালে দর্শন শাস্ত্রে এম.এ ডিগ্রি লাভ করার মাধ্যমে পড়ালেখা শেষ করেন। শিক্ষাজীবন শেষ করার পর তিনি রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯২৯ সালে সরকারি চাকুরী হতে অবসর গ্রহণের পর কলকাতা থেকে নিজ গ্রাম নলতায় ফিরে আসেন এবং ১৯৩৫ সালে নিজ গ্রামেই মানব সমাজের জাগতিক ও আধ্যাত্নিক সেবায় মহান ব্রত হয়ে ‘আহ্ছানিয়া মিশন‘ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৩৫ সাল থেকেই তিনি প্রতিবছর পবিত্র রমজান উপলক্ষে মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। ১৯৬৫ সালে হযরত থানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রহঃ) এর মৃত্যুর পর তার ভক্তকূল ও ‘আহ্ছানিয়া মিশন‘ কতৃপক্ষ এ ইফতার মাহফিল অব্যহত রাখেন।
বর্তমানে হযরত থানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রহঃ) রওজা প্রাঙ্গনেই এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয় এবং এর পরিধি বেড়ে প্রায় ১০,০০০ (দশ হাজার) এ পৌঁছেছে। রোজার শুরুর দিন থেকে ইফতারি করার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তর থেকে ছুটে আসে প্রায় দশ হাজারের মত রোজাদার মানুষ।
বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য ইফতারির ময়দানে অস্থায়ী টিনের ছাউনী দেয়া হয়। ইফতার বিলি-বন্টন ও তদারকির জন্য প্রায় ছয় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে।
ইফতারি সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, কলা, ছোলা, ডিম, সিংগাড়া, ফিন্নি ও চিড়া। এত মানুষের ইফতারির আয়োজনের পরেও জেলার বিভিন্ন মসজিদে একবার করে ইফতারি পৌঁছে দেয়া হয়।
ফিন্নি বাবুর্চি বাবু হোসেন জানান, প্রতিদিন ১৮/২০ মণ দুধ লাগে ফিন্নি রান্না করতে। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন ১০ হাজারেরও বেশি ডিম সিদ্ধ করতে হয়। প্রতিবছর তিনি এ কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে করে থাকেন।
“ডিম ও ছোলা সিদ্ধ”
সিংগাড়া বাবুর্চি মোঃ মোক্তার হোসেনের কাছ থেকে জানা যায়, তিনি এখানে ৩২ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। একসাথে ১৫ জন মিলে কাজ করেন। সকাল ১০ টা থেকে সিংগাড়া বাসানো শুরু হয় এবং ৫ টা বাজে শেষ হয়। কিন্তু ১০ টার সময় যে সিংগাড়া নামানো হয় তার স্বাদ এবং ৫ টার সময় যে সিংগাড়া বানানো হয় উভয়ের স্বাদ একই থাকে। সিংগাড়ার স্বাদ বা গুণগত মানের কোন পরিবর্তন হয় না- এটা আল্লাহর অশেষ রহমত।
নলতা শরিফ দরবারের শ্রদ্ধেয় খাদেম আলহাজ্ব মৌলভী আনসার উদ্দিন আহম্মেদ এর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় ইফতার এ কার্যক্রম। তিনি বলেন, সমাজের অসংখ্য মানুষ আছে যারা ঠিক মত ইফতারি খেতে পায় না। এমনকি রাতে ও সাহরিতেও ঠিক মত খেতে পায় না। আমরা এমন ভাবে ইফতারি দিয়ে থাকি যাতে তাদের রাতের খাবারের অভাববোধ না হয়।
স্বেচ্ছাসেবক ইসরাফিল হোসেন বলেন, আমরা ছয়শ স্বেচ্ছাসেবক রয়েছি এখানে। সকলেই নিজ উদ্যোগে এখানে এসেছি। বিকাল ৪টার পর থেকে বণ্টন কাজ শুরু করি। চেষ্টা করি যেন আগত কোনো রোজাদারের কোনোরূপ অসুবিধা না হয়।
সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য জগলুল হায়দার এর কাছ থেকে শোনা যায়, তিনি এখানে প্রতি রমজানে ইফতারি করার জন্য আসেন। অত্র এলাকার ধনী, গরীব সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত অসংখ্য রোজাদারে সাথে ইফতারি করাটা অন্যরকম তৃপ্তির ও আনন্দের।
নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী সদস্য ও ইফতার মাহফিলের তত্ত্বাবধায়ক চৌধুরী মোহাম্মাদ আমজাদ হোসেন বলেন, ক্রমান্বয়ে এটার পরিধি বেড়েই চলেছে। নতুন মসজিদটা নির্মাণ হয়ে গেলে ওখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসার স্থান হবে। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে টিন ও বাশ দিয়ে ছাউনি করা হয়েছে। এখানকার সকল কর্মকর্তাদের ইচ্ছা কেউ যেন খালি মুখে ফিরে না যায়। কেউ যেন কষ্ট না পায়।
“শিশু, বৃদ্ধ ও যুবক সকল বয়সী প্রায় ১০ হাজার রোজাদারদের দেখা মেলে এখানে”
এখানে প্রতিদিন রোজাদারদের জন্য দশ হাজার প্লেট প্রস্তুত করা হয়। এখনও কারও কোন সমস্যা হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। পবিত্র মক্কা শরিফের পর এটিই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল।
পবিত্র মক্কা ও মদিনা শরীফের পর তৃতীয় বৃহত্তম এতেকাফ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন শাখা মিশন হতে প্রায় ছয় থেকে সাতশো মুসল্লি নলতা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রতি বৎসর সমবেত হয়। ২১-২৮ রমজানের এ অনুষ্ঠানে স্থান বরাদ্দ ও অংশ গ্রহনে রেজিসেট্রশনের জন্য ২/৩ মাস আগে দরখাস্ত পেশ করতে হয়। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতির প্রত্যক্ষ পরিচালনায় মসজিদে মুসল্লিদের এবাদত ও বিশ্রামের স্থান রেজিসেট্রশনের ক্রমিক নাম্বার সেটে দিয়ে পূর্বেই নির্ধারণ করে রাখা হয়।
‘নলতা শরিফ‘ রাতের দৃশ্য

তথ্যঃ ১। www.ahsaniamission.org.bd/founder
         ২। www.facebook.com/KB.AhsanUlla.R
        ৩। গ্রন্থ “ভক্তের পত্র” হযরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ, প্রকাশকাল-১৯৩৬ সাল।
Share on Google Plus

0 comments:

Post a Comment