RECENT COMMENTS

পশ্চিম দিকে পা দিয়ে ঘুমানো; এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?

 


পশ্চিম দিকে পা দিয়ে বসা বা ঘুমানো যাবে না- এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?

সমস্ত নিখুঁত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি বিশ্বজগতের পালনকর্তা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন উপাস্য নেই এবং হযরত মুহাম্মদ (স:) তাঁর প্রেয়িত শেষ নবী ও রাসূল। আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে যে,“কিবলার দিকে পা করে ঘুমালে গুনাহ হবে অথবা এটা মাকরূহ।” কিন্তু বাস্তবতা হল, কিবলার দিকে পা দিয়ে বসা বা ঘুমানোর ব্যাপারে ইসলামে কোন ধরণের নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয় নি।

সুতরাং উপরোক্ত ধারণা সঠিক নয়। বরং ইমাম মালেক ও ইমাম আবু হানিফা (রাহ:) এর মতে, অসুস্থ ব্যক্তি কিবলার দিকে পা ছড়িয়ে শুয়ে শুয়ে ইশারায় সালাত আদায় করবে করতে পারে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। বরং অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে শুয়ে ইশারায় সালাত আদায়ের সময় কিবলার দিকে পা বিছিয়ে সালাত আদায় করাকে অনেক ইমাম মুস্তাহাব বলে উল্লেখ করেছেন । কিবলার দিকে পা ছড়িয়ে বসা বা শুয়া যাবে না- এ কথার কোন দলীল নাই। সুতরাং বিনা দলীলে কোন কিছুকে হালাল, হারাম, নেকি, গুনাহ এমনকি মাকরূহ বলাও গ্রহনযোগ্য নয়।

ইসলামে দলীল ছাড়া কোন কিছুকে উত্তম, হারাম বা মাকরূহ বলার সুযোগ নেই। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মানুষ যে দিকে ইচ্ছা মাথা বা পা রেখে ঘুমাতে পারে। এতে কোন বাধ্য-বাধ্যকতা নেই। তাই একজন মানুষ স্বাধীনভাবে যে দিকে ঘুমালে তার সুবিধা হয় সেই দিকে মাথা বা পা রেখে ঘুমাতে পারে। এমনকি কিবলার দিকে পা রেখে ঘুমাতেও কোন দোষ নেই- যদি কিবলাকে অপমান করা উদ্দেশ্য না থাকে।

রাসূল সা. খোলা স্থানে পেশাব-পায়খানা করার সময় কিবলাকে সামনে বা পেছনে রাখতে নিষেধ করেছেন এবং কেবলার দিকে থুতু ফেলতেও নিষেধ করেছেন (বুখারী ও মুসলিম) কারণ এটা অসম্মান কাজ। কিন্তু পা দেওয়াটা অসম্মানের কিছু নয় (যদি কিবলাকে অপমান করা উদ্দেশ্য না থাকে)। কিন্তু ঘুমের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন নি। তাই এতে কোন অসুবিধা নেই।

তবে কেউ যদি কিবলাকে অবজ্ঞা করার উদ্দেশ্য বা কাবা শরীফের মানহানীর নিয়তে এমনটি করে তবে তা মারাত্মক গুনাহের কাজ তাতে কোন সন্দেহ নাই।

উল্লেখ্য যে, হানাফী মাযহাবের কোন কোন আলেম কিবলার দিকে ঘুমের সময় বা অন্যান্য সময় কিবলার দিকে পা দেয়াকে মাকরূহ বলেছেন। কিন্তু মূলত: দলীল বহির্ভূত কথা। কোন কিছুকে মাকরূহ বলতে হলে তার পক্ষে দলীল লাগবে। কেবল যুক্তি দিয়ে হুকুম সাব্যস্ত করা যায় না। সুতরাং বিনা দলীলে মাকরূহ বলা গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে হানাফী মাযহাব ছাড়া বাকি তিন মাযহাবের কোন ইমামগণই এটিকে মাকরূহ বলেন নি।

উল্লেখ্য যে, কেউ যদি পবিত্র কা’বার দিকে পা দেয়াটা অসম্মানের মনে করেন তবে এটা ইসলামের প্রতি তার অন্তরের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ বোঝায়। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তায়ালা বলেছেন, "যদি কেউ আল্লাহর প্রতীকগুলির পবিত্রতা লক্ষ্য করে তবে অন্তরের তাকওয়া থেকে এ জাতীয় জিনিস উদ্ভূত হয়।" (সূরা- আল-হাজ্ব, আয়াত-৩২) কিবলা (কা'বার দিকনির্দেশ) আল্লাহ তা'আলার অন্যতম শায়র বা প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। সুতরাং, কেবলা সম্মান করা উচিত। অন্যের অসম্মানের চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হওয়ার আগে কারও পা প্রসারিত করা এবং এর পা ছড়িয়ে দেওয়া। কিবলা হচ্ছে কা'বার দিকে মুখ করা দিক, যা মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে পবিত্র স্থান। কিবলার দিকে প্রার্থনা করা একজন মুসলিমের স্বতন্ত্র লক্ষণগুলির মধ্যে একটি, যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা এই উম্মতকে দোয়া করেছিলেন এবং দান করেছিলেন।

মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকটা বুঝে নেক আমল করার তৌফিক দান করুক, আমীন।

 

তথ্যসূত্র:-

Sheikh Abdullahil Hadi Al Madani,

মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি সৌদি আরব,

দাঈ, জুবাইল, সউদী আরব।

 

 


Share on Google Plus

0 comments:

Post a Comment