হাওড় বেষ্টিত জেলাগুলোর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলা প্রাকৃতিক
সৌন্দর্য়্যে ভরপুর হলেও নানা সমস্যায় জর্জরিত। তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হলো শিক্ষার
দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা। দেখা যায় অনেক ছোট্ট শিশু বিদ্যালয়ে না গিয়ে নানা কাজ কর্মের
সাথে জড়িয়ে পড়ে। আবার দেখা যায় অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দারিদ্রতা ও যথাযথ সুযোগ
না পাওয়ার কারণে পড়াতে পারেনি।
আজ আমরা মাহফুজা আঞ্জুম ইসরাত এর গল্প শুনবো। তার বাবার নাম- সুয়েব মিয়া, মায়ের নাম- রুজিনা বেগম। তার বাবা একজন দিনমজুর, মা গৃহিনী। ইসরাতের ছোট আরও দুই বোন ও এক ভাই আছে। অভাবের সংসারে সে বড় হতে থাকে। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। অভাবের কারণে ইসরাতের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেছে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তার বাবা্। অল্প আয়ে অভাবের সংসার কোন মতে চলে। ইনরাতের বাবা, সুয়েব মিয়া জীবন-জীবিকার তাগিদে সকালে বের হয়ে যেতেন আর রাতে বাসায় ফিরতেন। মা রুজিনা বেগম সারাদিন গৃহকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
ইসরাতকে বাড়িতে সময় দেয়ার মত কেউ ছিল না। পাঁচ বছর বয়সে শিশুর মধ্যে যে পরিবর্ত থাকার কথা তার থেকে তার থেকে অনেক পিছিয়ে আছে ইসরাত। সে অন্য শিশুদের সাথে খুব একটা মিশতো না, স্কুলে যেতে চাইতো না এ বিষয়ে মা বাবার দুঃচিন্তা ছিল। স্কুলে যাওয়ার কথা শুনলে তার মা যখনই কোন কাজে বাড়ির বাহিরে যেতেন তখন তাকে একা ঘরে দরজা বন্ধ করে যেতেন। ছোটবেলা থেকে সে একা একা বড় হয়, তাই সে কেমন যেন অস্বাভবিক হয়ে যায়।
২০১৯ সালে দরগাপাশা ইউনিয়নে নুরপুর গ্রামে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তক পরিচালিত লেট আস লার্ন প্রকল্পের অথীনে ‘আনন্দধারা প্রাথমিক শিশু শিক্ষা কেন্দ্‘ নামে একটি স্কুল চালু করে। এ প্রেক্ষিতে নুরপুর গ্রামে শিক্ষার্থী জরীপে মাহফুজা আঞ্জুম ইসরাতের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু ইসরাত কিছুতেই স্কুলে ভর্তি হতে চায় না, তাকে অনেক বুঝিয়ে নিয়ে আসা হয় এবং কেন্দ্রের সুসজ্জিত ডেকোরেশন আর বিভিন্ন আকর্ষনীয় খেলনা সামগ্রী তাকে আকৃষ্ট করে। আর সেই লোভে সে প্রতিদিন স্কুলে আসতে থাকে। কেন্দ্র শিক্ষক ইসরাতকে তারমত করে মানিয়ে নিতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেন। আসতে আসতে তার মধ্যে পরিবর্তন আসে। সেও তার সহপাঠিদের সাথে হাঁসে, খেলে ও পড়ে। এখন স্কুলে আসতে ভয় পায় না।
যে ইসরাত আগে কথা বলতে ভয় পেত, স্কুলের কথা শুনলে দৌঁড়ে পালাতো, সেই ইসরাত এখন তার সহপাঠীদের সাথে নিয়মিত স্কুলে যায়। সহপাঠিদের সাথে হাঁসে, খেলে ও পড়ে, ছড়া বলে, গান গাইতে পারে ও গল্প বলতে পারে। দলে বসে পড়তে ও কারো সাথে মিশতে ভয় পায় না। বর্তমান করোনাকালীন সময়ে সে মোবাইল বেইজ ক্লাসেও সুন্দর ভাবে অংশগ্রহণ করছে। কেন্দ্র শিক্ষক মিলি ইসলাম বলেন, ”ইসরাতকে স্কুলমুখী ও লেখাপড়ায় আগ্রহী করা আমার জন্য খুব চ্যালেঞ্জ ছিল, কারণ প্রথম দিকে সে কেন্দ্রে আসতে চাইতো না, সহপাঠীদের সাথেও মিশতো না। কিন্তু স্কুলে আসার ছয় মাস পর ইসরাতের আচরণের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। তার এই পরিবর্তনে আমি খুব খুশি এবং তার ভবিষ্যত সাফল্য কামনা করি।” তার বাবা সুয়েব মিয়া বলেন, ”আমার মেয়ের এই পরিবর্তন দেখে আমি খুব আনন্দিত এবং ধন্যবাদ জানাই ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন ও দাতা সংস্থা ইউনিসেফকে। জীবনের তাগিদে কাজে ব্যস্ত থাকায় মেয়ের পড়াশোনা কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা আমি বুঝতে পারি নাই। কিন্তু ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের কর্মীরা আমার মেয়েকে খুঁজে বের করে স্কুলে ভর্তি করে যার ফলে আমার মেয়ের এই পরিবর্তন এসেছে।”
যদিও তার ভালোমন্দ বুঝায় বয়স হয়নি তবুও তাকে যদি বলা
হয় ইসরাত তুমি বড় হয়ে কি হবে?
-সে মুঁচকি হাঁসি দিয়ে উত্তর দেয়- ‘আমি ম্যাডাম হবো’।
ছোট্ট একটা মেয়ে অল্প সময়ের এই পরিবর্ত প্রমান করে
সঠিক নির্দেশনা ও সঠিক পরিচর্যায় অনেক অসম্ভব কাজকেও সম্ভব করা যায়।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন
লেট আস লার্ন প্রকল্প,
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ
0 comments:
Post a Comment