জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০
এর সুপারিশের আলোকে বাংলাদেশ সরকার প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষাকে একটি স্বতন্ত্র ও পৃথক
শ্রেণি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সরকার জাতিসংঘের ‘সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষমাত্রা’ অনুযায়ী
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা অর্জনে দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। মানসম্মত প্রাথমিক
শিক্ষা নিশ্চিত করতে ও ঝরে পড়া কমাতে এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির হার বাড়াতে প্রাক-প্রাথমিক
শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রাক-প্রাথমিক
শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্যঃ
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা
হলো প্রাথমিক শিক্ষার পূর্ববর্তী এক বছর মেয়াদী শিক্ষা যেখানে শিশুর সার্বিক বিকাশ
নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষার শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত অভিষেক ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয়
প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। প্রাথমিক শিক্ষা মূলত ৫-৬ বয়সী শিশুদের শারীরিক,
মানসিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ভাষাগত ও সামাজিক বিকাশের মজবুত ভিত্তি তৈরি করে। এই ভিত্তি
শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষঃ
আনন্দময় ও শিশুবান্ধব
পরিবেশে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উপযোগী শিশুদের (৫+ বছর) বয়স ও সামর্থ্য অনুযায়ী শারীরিক,
মানসিক, আবেগিক, নান্দনিক, বুদ্ধিবৃত্তীয় ও ভাষাভিত্তীয় তথা সার্বিক বিকাশে সহায়তা
দিয়ে আজীবন শিকখনের ভিত্তি রচনা করা এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার অঙ্গনে তাদের সানন্দ
ও স্বতঃস্ফূর্ত অভিষেক ঘটানো।
প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যঃ
ক) আনন্দময় ও শিশুবান্ধব
পরিবেশে বিভিন্ন খেলা ও কাজের মাধ্যমে শিশুর সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি।
খ) শেখার প্রতি ইতিবাচক
মনোভাব তৈরি
গ)
শিশুর সৌন্দর্য, নান্দনিকতাবোধ ও সুকুমারবৃত্তি বিকাশে সহায়তা।
ঘ)
শিশুকে পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন করা।
ঙ)
নিজস্ব সাংস্কৃতিক আচার, কৃষ্টি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি
এর চর্চায় উৎসাহ প্রদান।
চ)
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সামাজিক রীতিনীতি বিকাশে সহায়তা করা।
ছ)
শিশুর স্থূল ও সূক্ষ্ম পেশি তথা চলনশক্তির বিকাশে সহায়তা করা।
জ)
স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নিরাপত্তা বিধানে সহায়তা।
ঝ)
শিশুর ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতা বিকাশে সহায়তা।
ঞ)
প্রারম্ভিক গাণিতিক ধারণা, যৌক্তিক চিন্তা ও সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা অর্জনে সহায়তা
করা।
ট)
পরিবেশের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কারণ ও ফলাফল সম্পর্ক অনুধাবনে
সহায়তা করা।
ঠ)
শিশুর স্বতঃস্ফূর্ত কল্পনা, সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশে সহায়তা।
ড)
শিশুর আত্নবিশ্বাস ও আত্নমর্যদা বিকাশে সহায়তা করা এবং নিজের কাজ নিজে করতে উদ্বূদ্ধ
করা।
ঢ)
আবেগ বুঝতে পারা ও তার যথাযথ প্রকাশে সহায়তা প্রদান।
ণ)
শিশুকে পারস্পরিক সমঝোতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রদান।
ত)
শিশুকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী করে তোলা ও মতামত প্রকাশে উৎসাহিত করা।
থ)
শিশুকে বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা।
তথ্য সূত্র-
শিক্ষক
সহায়িকা- আগস্ট, ২০১৬,
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ।
0 comments:
Post a Comment