দুধ আমাদের জীবনে অত্যন্ত
প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য। শিশু থেকে বৃদ্ধ, সব বয়সী মানুষের শরীরের জন্য দুধ খাওয়া অপরিহার্য।
শরীরের প্রয়োজনীয় ক্যারসিয়ামের যোগান দেয় দুধ। কিন্তু সম্প্রতি ভ্রাম্যমান আদালতের
একটি অভিযানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান বাজারে যেসব দুধ আছে তার মধ্যে ৭৫% দুধই
ভেজালযুক্ত। প্লাস্টিকের দুধ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শ্যাম্পু দিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি
হচ্ছে দুধ। দুধ সাদা করার জন্য একধরণে ক্যামিকেল দেয়া হয়, ঘন করার জন্য একধরণের ক্যামিকেল,
ফ্যানা আসার জন্য একধরণের ক্যামিকেল, জ্বাল দেয়ার পর দুধের উপর শর পরার জন্য ক্যামিকেল
এবং দুধের ঘ্রাণ আনার জন্য ক্যামিকেল ব্যবহার করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়া বা সংবাদ মাধ্যমগুলির
মাধ্যমে সেসব খবর আমরা জানতে পারছি। যতাদন যাচ্ছে তত আমরা জানতে পারছি বিভিন্ন দ্রব্যের
ভেজালের কথা। আজ সমগ্র দেশের মানুষ আতঙ্কগ্রস্থ। তবুও কি আমারা দুধ খাওয়া বাদ দিতে
পারি? এর সহজ উত্তর, ‘না’। কিন্তু কিভাবে চিনবো ভেজাল দুধ? তেমন কোন উপায় আছে কি? হ্যাঁ,
উপায় আছে। চলুন, ভেজাল দুধ চেনার কয়েকটি সহজ উপায় জেনে নেইঃ-
১। পানি মেশানো দুধঃ
পরিস্কার সামান্য একটু ঢালু স্থানে কয়েক ফোঁটা দুধ
ফেলুন। যদি দুধ আসতে আসতে গড়াতে থাকে এবং দুধের সাদা দাগ দেখা যায় তাহলে খাঁটি দুধ।
অন্যদিকে
যদি দুধের ফোঁটাটি কোনো দাগ ছাড়াই ঢালু জায়গা দিয়ে তাড়াতাড়ি গড়াতে থাকে, তাহলে
বুঝবেন সেই দুধে জল মেশানো আছে।
২। কার্বোহাইড্রেট মেশানো দুধঃ এক
কাপ দুধ একটা পাত্রে নিয়ে তার মধ্যে ২ চামচ লবণ দিন। দুধের রং নীল হয়ে যায় বুঝতে
এতে কার্বোহাইড্রেট মেশানো আছে। তাছাড়া যদি দেখেন দুধ গরম করতে গেলেই
অস্বাভাবিক হলদেটে হয়ে যাচ্ছে- তাহলে বুঝবেন এ দুধ খাঁটি নয়। এতে মেশানো
হয়েছে কার্বোহাইড্রেট।
৩। ডিটারজেন্ট
মেশানো দুধঃ এক কাপ দুধ
ও সমপরিমাণ পানি নিয়ে একটি শিশিতে ভালো করে ঝাঁকান। যদি ফেনা তৈরি হয়, তাহলে বোঝা
যাবে দুধে ডিটারজেন্টের গুঁড়ো মেশানো আছে কিনা। খাঁটি দুধে খুব পাতলা ফেনা সৃষ্টি হবে।
৪। মাওয়া, পনির মেশানো দুধঃ কোন ফার্মেসী থেকে আয়োডিন
টিনকিউর কিনে নিন। একটি পাত্রে ২-৩ মিলিলিটার দুধের সাথে ৫ মিলিলিটার পানি মিশিয়ে
কিছুক্ষণ ফুটান। এরপর ঠান্ডা করে ২-৩ ফোঁটা আয়োডিন টিনকিউর দিন। যদি দুধের রং
নীলচে হয়, তাহলে বুঝবেন ভেজাল দুধ অথ্যাৎ দুধে মাওয়া বা পনির মেশানো আছে। যদি
আয়োডিন টিনকিউর হাতের কাছে না পান, তবে লবণ দিয়ও পরীক্ষাটি করতে পারবেন। লবণে
প্রচুর আয়োডিন থাকে।
৫। কৃত্রিম দুধঃ উচ্চ মাত্রার ভেজাল
দিয়ে খাঁটি দুধের আদলে তৈরি করা হয় কৃত্রিম দুধ, যা সিন্থেটিক বা প্লাস্টিক দুধ হিসেবে
পরিচিত। সিন্থেটিক দুধের স্বাদ তেতো। সহজেই এই ভেজাল দুধ চেনার উপায় হচ্ছে, হাতের আঙুলে
নিয়ে একটু ঘষলে সাবানের মতো অনুভূতি হবে। এছাড়া দুধ গরম করার পর হলদেটে রং ধারণ করবে।
তাছাড়া আপনি যদি
ভেজাল বা ‘সিনথেটিক’ দুধ সহজে চিনতে চান, তাহলে দুধের গন্ধ ভালো করে শুঁকে দেখে
নিন। সিনথেটিক দুধে নানারকম রাসায়নিক জিনিস মেশানো থাকে, ফলে খাঁটি দুধের সাথে ওর
ফারাক গন্ধেই খানিক বোঝা যায়। খাঁটি দুধ খেতেও মিষ্টি হয়। অন্যদিকে ভেজাল দুধ যদি
খেয়ে দেখেন, তাহলে আপনি সামান্য তেঁতো স্বাদ পাবেন।
৬। ইউরিয়া মেশানো দুধঃ এক চামচ দুধে সয়াবিন
মেশান। কিছুক্ষণ রেখে এতে লিটমাস পেপার
রাখুন। যদি লিটমাস ডোবাতেই লাল লিটমাস নীল হয় তবে বুঝবেন ইউরিয়া রয়েছে সেই দুধে।
৭। ফরমালিন,
ডালডা বা বনস্পতি মেশানো দুধঃ একটি
টেস্টটিউবে ১০ মিলিলিটার দুধ নিন এবং এতে ৫ মিলিলিটার সালফিউরিক অ্যাসিড যুক্ত করুন।
যদি বেগুনি বা নীল রঙ প্রদর্শিত হয় তাহলে বুঝতে হবে দুধে ফরমালিন মেশানো হয়েছে। দুধ
দীর্ঘদিন নষ্ট না হওয়ার জন্য এতে ফরমালিন, ডালডা বা বনস্পতি মেশানো হয়, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত
ফরমালিন মিশ্রিত দুধ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
*সোর্সঃ- প্রথম আলো,
কালের কন্ঠ, আনন্দবাজার পত্রিকা, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ব্লগ।
0 comments:
Post a Comment