RECENT COMMENTS

আব্রাহাম লিঙ্কনের ‘তাঁর ছেলের শিক্ষকের কাছে লেখা চিঠি’ সম্পূর্ণ জাল

ছবি সংগ্রহ- গুগল

কতিথ আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিঙ্কন তার পুত্রের স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে একটি চিঠি লিখেছিলেন। যা পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক মর্যাদা লাভ করে। আজ থেকে প্রায় দেড়’শ বছর আগে তিনি তার আট বছর বয়সী পুত্র জর্জ প্যাটেনের স্কুলের প্রধান শিক্ষককে লেখেন ওই চিঠি। অনেকেই আমরা সেই চিঠি সম্পর্কে জানি, আবার অনেকেই জানি না। যারা জানি না, চলুন চিঠিটি একবার পড়ে নেই;
”মাননীয় মহোদয়,
আমার পুত্রকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনার কাছে পাঠালাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন এটাই আপনার কাছে আমার প্রত্যাশা। আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন, সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়। তাকে এও শেখাবেন; প্রত্যেক খারাপের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে, প্রত্যেক স্বার্থপর রাজনীতিবিদের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকেন। তাকে শেখাবেন, পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চাইতে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান।
তাকে শেখাবেন, কীভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কীভাবে বিজয়োল্লাস উপভোগ করতে হয়। হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দেবেন। যদি পারেন নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন একথা বুঝতে শেখে, যারা অত্যাচারী তাদেরকে নীরব হাসির গোপন সৌন্দর্য দিয়ে সহজেই কাবু করা যায়। বইয়ের মাঝে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, তাও তাকে শেখাবেন।
আমার পুত্রকে শেখাবেন, বিদ্যালয়ে নকল করে পাস করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। নিজের ওপর তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে, এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভুলও মনে করে।
তাকে শেখাবেন, ভালো মানুষের প্রতি ভদ্র আচরণ করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে। আমার পুত্র যেন হুজুগে মাতাল জনতার পথ অনুসরণ না করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন। সে যেন সবার কথা শোনে এবং সত্যটা ছেঁকে যেন শুধু ভালোটাই শুধু গ্রহণ করে এ শিক্ষাও তাকে দেবেন। সে যেন শেখে দুখের মাঝেও কীভাবে হাসতে হয়। আবার কান্নার মাঝে লজ্জা নেই, সে কথাও তাকে বুঝতে শেখাবেন। যারা নির্দয়, নির্মম তাদেরকে সে যেন ঘৃণা করতে শেখে। আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে সাবধান থাকে।
আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেননা, কেননা আগুনে পুড়েই ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তান যেন বিপদে ধৈর্যহারা না হয়, থাকে যেন তার সাহসী হবার ধৈর্য। তাকে এ শিক্ষাও দেবেন, নিজের প্রতি তার যেন পূর্ণ আস্থা থাকে আর তখনই তার পূর্ণ আস্থা থাকবে মানব জাতির প্রতি।
ইতি
আপনার বিশ্বস্ত;
আব্রাহাম লিঙ্কন”।

ইন্টালেকচ্যুয়াল টেকআউট সংস্থার কন্টিবিউটার জন মিল্টিমোর সম্প্রতি আব্রাহাম লিঙ্কন এর চিঠি নিয়ে গবেষণা করে বলেছেন,
একটি ছোট্ট ওয়েবসাইটে চিঠিটি পঞ্চাশ লক্ষেরও বেশি মতামত প্রকাশ করেছে এবং কয়েক ডজন মন্তব্য পেয়েছে। তবে চিঠিটি সম্পর্কে কয়েকটি জিনিস একেবারেই সঠিক মনে হয়নি। এতে কোনও তারিখ অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আব্রাহাম লিঙ্কনের কোন ছেলে স্কুলে যাচ্ছিল তাও তা জানায় না। স্কুলের নাম এবং স্কুল শিক্ষকের নাম কিছুই জানা যায়নি।
চিঠির সুর ও শৈলী এর মধ্যে তেমন সাদৃশ্য মনে হয়েনি। আব্রাহাম লিঙ্কন ছিলেন একজন গুণী লেখক। এই নোটটি সংবেদনশীল এবং ক্লিকযোগ্য মনে হয়েছিল। লেখক চারটি অনুচ্ছেদে তিনটি বার জেন্টেল বা সদয়" (বা এটির একটি প্রকরণ) ব্যবহার করেছেন, লেখায় একটি ছদ্মবেশী শব্দ।
আমি চিঠিটি সম্পর্কে আরও জানতে গুগলিং শুরু করেছি এবং দ্রুত এটির একটি ভিন্নতা পেয়েছি, যা ওয়েবসাইট এবং বই উভয়ই তে প্রকাশিত হয়েছিল। এরুপ দুটি চিঠি, কয়েক ডজন ব্লগ বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেলে প্রকাশিত হয়। এমনকি এটির বিভিন্ন ইউটিউব ক্লিপও রয়েছে।
তবুও, আমি চিঠির সত্যতা খুঁজে পাইনি। তাই আমি কয়েকজন লিঙ্কন বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে খোঁজ নিয়েছি এবং তৎক্ষণিক দুটি উত্তরও পেয়েছি। তাদের মন্তব্য ছিলো, “আপনার সন্দেহ সঠিক। এই চিঠিটি প্রকৃতপক্ষে জাল চিঠি এবং সময়ের সাথে সাথে এটি ভাইরাল হয়,
"আব্রাহাম লিঙ্কন প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরি এবং জাদুঘর” এর ইতিহাসবিদ ম্যাকউইটার এর মতে, "এই চিঠির কোনও আসল পান্ডুলিপি অনুলিপি এখনো পাওয়া যায়নি এবং এটি লিংকনের কোনও‘ পুনঃবিস্মৃত শব্দের ’মধ্যে অন্তর্ভুক্তও নেই”। ম্যাকউইটার আরো যোগ করে বলেন যে, "সত্যিই এটা লিঙ্কনের মত লেখা মনে হয় না" এবং অনুমান করা যায় যে, চিঠিটি সম্ভবত কোনও তৃতীয় পক্ষের লেখা একটি কবিতা এবং পরে ষোড়শ রাষ্ট্রপতির নামে চালিয়ে দেয়া হয়
ইলিনয় রাজ্যের ইতিহাসবিদ স্যামুয়েল বলেন, “এই বিশেষ চিঠি নিয়ে আমাদের কে অনেকবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। এবং আমরা বলেছি, আব্রাহাম লিঙ্কন কখনও এ জাতীয় চিঠি লেখেনি।"
জন মিল্টিমোর বলেন, ইন্টারনেটে সব জিনিসই আমরা সত্য হিসেবে পাই না। তবে, ইন্টারনেট আমাদের লাইফের একটি দারুন সুযোগ যে, খুব দ্রুত প্রকৃত সত্যটি তুলে ধরতে পারি। তেমনি, আব্রহাম লিঙ্কনের জাল চিঠিও আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলাম। আজ থেকে আপনারাও জানলেন, এটি একটি জাল বা ভুয়া চিঠি।


তথ্যসংগ্রহ:
www.intellectualtakeout.org/article/abraham-lincolns-letter-his-sons-teacher-totally-fake/
Share on Google Plus

0 comments:

Post a Comment