”ধর্ষণরোধে আন্দোলন নয়; চাই সুস্থ পরিবেশ ও সঠিক
মুল্যবোধের চর্চা”
একজন মানুষ তার দৃষ্টভঙ্গি পরিবর্তন করে শুদ্ধ
মানুষ হতে পারে। এমনকি, দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরবির্তন ঘটিয়ে মানুষ তার জীবনে সফলতার
স্বর্ণ শিখরে পৌছানোর ক্ষমতা রাখে। কিন্তু কীভাবে সেই ইতিবাচক দৃষ্টভঙ্গি তৈরি হয়
যার উপর ভর করে মানুষ সারা জীবন সততার উপর চলতে পারে? মানুষ চাইলেই কি হঠাৎ তার
দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে রাতারাতি সাধু হয়ে যেতে পারে? নাকি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
তৈরির পেছনে আরো কিছুর যোগ সূত্র আছে? ভালো কিছু করার জন্য চাই আমাদের দৃঢ় ইচ্ছা
শক্তি, শিক্ষা, পরিবেশ ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়।
ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির পেছনের মুল চালিকা শক্তি
হল আমাদের মুল্যবোধ। মূল্যবোধ একজন মানুষের আচরণ পরিচালনাকারী প্রধান নীতি ও
মানদণ্ড। একটি দেশের সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উৎকর্ষতার অন্যতম
মাপকাঠি হল মুল্যবোধ। ব্যাপক অর্থে, মূল্যবোধ হল সমাজ ও রাষ্ট্রের ভিত্তি। সুতরাং
এই ভিত্তি যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, তাহলে সেই সমাজ বা রাষ্ট্রের অনেক কিছুতেই
ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। এমন ভারসাম্যহীন রাষ্ট্রে জনগণের মনে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
তৈরি হয় না।
যে রাষ্ট্রে, সরকারি চাকুরিকে সোনার হরিণ বানায়,
ঘুষকে সেকেন্ড লিগ্যাল ইনকাম মনে করা হয়, সংস্কৃতি আমাদের উদাম হতে শেখায়, ধর্মীয় শিক্ষার
নামে গোড়াঁমি শেখায়, শিক্ষ ব্যবস্থায় চরিত্র গঠনের পাঠ থাকে না, ধর্মীয় শিক্ষা
থাকে না, শুধু মাত্র সার্টিফিকেট অর্জনের উপর গুরুত্ব দেয়, সেই সমাজে কখনোই ইতিবাচক
দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে পারে না। একজন শিশু জন্মের পর থেকে চারিদিকে নেতিবাচক ঘটনা
দেখতে দেখতে বড় হয়। নীতি, মুল্যবোধ কি এগুলা সে জানেই না। তাহলে ১৮ বছর পর তার কাছ
থেকে আমারা কি ধরণের দৃষ্টিভঙ্গি আশা করতে পারি? অবশ্যই খারাপ কিছু ছাড়া ভালো কিছু
আশা করতে পারি না। সুতরাং রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট নীতি, মুল্যবোধ ও আদর্শ থাকা উচিত; যে আদর্শ চর্চার মাধ্যমে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি সুন্দর ও সৎ হয়।
মানুষ তাই করে যা তাদের আদর্শ বা মুল্যবোধ
তাদের করতে বলে। মানুষ তার মুল্যবোধের উপর নির্ভর
করেই কোন কাজটি করবে, কোন কাজটি করবে না তার সিদ্ধান্ত নেয়। ব্যক্তি চরিত্র নির্ভর
করে মূল্যবোধের উপর। সুতরাং পারিবরিকি, সামাজিক, রাষ্ট্রিয়, ধর্মীয় প্রত্যেকটি
ক্ষেত্রেই মূল্যবোধের গুরুত্ব অপরিসীম।
যদি পারিবারিক ও নৈতিক মূল্যবোধ শিক্ষার পাশাপাশি শিশুদের
ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে পারি তাহলে, আশা করা আমাদের ভাবিষ্যত প্রজন্ম সুস্থ
ও উন্নত মানসিকতা নিয়ে গড়ে উঠবে। এছাড়া পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি জীবনদক্ষতা বিষয়ক
চর্চার মাধ্যমে মাধ্যমে শিশুরা দেশীয় কৃষ্টি-কালচার, মূল্যবোধ, নীতি সম্পর্কে
শিখতে পারবে। এভাবে একজন শিশু বাল্যকাল থেকে সঠিক ও সুশিক্ষা পেয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের একজন আদর্শ
নাগরিক হতে উঠতে পারে। প্রত্যকেই তার নিজ নিজ
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব, কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে জানবে। একজন
আদর্শবান মানুষ কখনোই অন্য নারীর প্রতি ধর্ষণের
দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তাকাবে না। ধর্ষণরোধে আন্দোলন করতে আমাদের রাস্তায় নামতে হবে না। আমরা এমনই একটি
রাষ্ট্র চাই।
__শরশ দিগন্ত
0 comments:
Post a Comment