একপষলা
বৃষ্টির পর আকাশ ঝলমলে দেখা যায়। প্রকৃতি সাজে বহুরুপ সাজসজ্জ্বায়। আকাশবধূ ভেসে ওঠে
দিগন্তের এক কোণে; এই বধূর নাম রংধনু। কল্পনায় প্রেমিক তার প্রেমিকাকে মালা পড়িয়ে দিতে
চায়। সেই মালা হবে রংধনুর মালা। আমাদের অসংখ্য কল্পনার ইচ্ছার সাথে জড়িয়ে আছে প্রকৃতির
অপরুপ সৌন্দর্যে ভরা রংধনুর সাথে। রংধনুর দিকে তাকিয়ে পুলকিত হয় না এমন মানুষ বিরল।
আমরা
সবাই জানি যে, বৃষ্টির পর রংধনু দেখা যায়, কিন্তু রংধনু কিভাবে সৃষ্টি হয় তা কি আমরা
জানি? আমরা অনেকেই জানি না কিভাবে রংধনু সৃষ্টি হয়। তাহলে চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক
কিভাবে রংধনু সৃষ্টি হয়:-
জলীয় বাষ্প মিশ্রিত বৃষ্টির কণা বাতাসের মধ্যে
দিয়ে সূর্যের আলো যাওয়ার সময় আলোর প্রতিসরণের কারণে সাত রঙের একটি বর্ণালীর সৃষ্টি
হয়। এই সাতটি রং হচ্ছে বেগুনী, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। বাংলাতে এই সাতটি
রং সহজে মনে রাখার জন্য আমরা সংক্ষেপে ‘বেনীআসহকলা’ বলে থাকি। বৃষ্টির পর আকাশে দৃশ্যমান
এই সাতটি রং এর গুচ্ছ কে আমরা রংধনূ বলে থাকি। আরও সহজ করে বললে, বৃষ্টির পর বাতাসে
ভেসে থাকা সূক্ষ্ণ সূক্ষ্ণ লক্ষ লক্ষ গোলাকার পানির কণার উপর সূর্যের আলো বিশ্লিষ্ট
হয়ে এই রংধনু সৃষ্টি হয়। এই আলোগুলো যখন
পানির
কণার
অপর
প্রান্তে আসে
তখন
পানির
ওই
মসৃণ
তলটায়
ধাক্কা
খেয়ে
বেরিয়ে
যায়।
যেটা
হল
প্রতিফলন। শেষ
পর্যন্ত ঐ আলোগুলো পানির কণা থেকে
বের
হওয়ার
সময়
আরেকবার দিক
পরিবর্তন করে
বের
হয়।
আর
তখনই
সাতটা
আলাদা
আলাদা
রং
একসাথে
দেখা
যায়।
এজন্য
বৃষ্টি
হওয়ার
কিছুক্ষণ পর
আকাশের
যেদিকে
সূর্য
আছে
তার
বিপরীত
দিকের
আকাশে
রংধনু
দেখা
যায়।
রংধনু হিসেবে আমরা যা
দেখতে
পাই
তা
আপাত
দৃষ্টিতে ধনুকের
মতো
অর্ধচন্দ্রাকার হলেও
তা
আসলে
গোলকার
বা
বৃত্তাকার। রংধনু সাতটি রং এর পূর্ণ
বৃত্ত হয়ে থাকে। আমরা যেহেতু নিচ থেকে রংধনু দেখি, তাই এটি আমাদের কাছে ধনুক বা অর্ধগোলাকৃতির
দেখায়। কিন্তু কেউ যদি অনেক উচু পাহাড় বা উড়োজাহাজ থেকে দেখে সে পূর্ণ বৃত্তাকার
রংধনু দেখতে পাবে।
রংধনু
সাধারণত সকাল এবং সন্ধ্যায় দেখা যায়। তবে খুব কম ক্ষেত্রেই দুপুরের দিকে দেখায়
যায়। কারণ রংধনু তৈরি হওয়ার জন্য আলোকে একেবারে ৪২ ডিগ্রী হিসেবে বৃষ্টির ফোঁটা
ভেদ করে আসতে হয় যা দুপুরবেলায় সম্ভব নয়। কারণ দুপুরবেলায় সূর্যের তাপমাত্রা ৪২
ডিগ্রীর ওপরে থাকে।
মুন বো:
চাদের
আলোয় রংধনু! আমরা সবাই অবাক হচ্ছি কথাটা শুনে।
চাঁদেরও আবার রংধনু হয় নাকি? হ্যাঁ শুধু বাতাসে ভেসে বেড়ানো সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলবিন্দুর উপর শুধু সূর্যের আলো পড়লেই যে রংধনু সৃষ্টি হয় তা নয়। চাঁদের আলোতেও রংধনু হতে পারে। তবে এই রংধনু সূর্যের আলোয় সৃষ্ট রংধনুর মতো অত সুন্দর হয় না। সূর্য অস্ত গেলে তবেই আকাশে চাঁদ দেখা যায়। তাই এই রংধনু রাতে দেখতে পাওয়া যায়। বড় বড় ফোয়ারা বা ঝরনার সামনে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম জলকণার যে কুয়াশা সৃষ্টি হয় তাতে চাঁদের আলো পড়লে অনেক সময় রংধনু দেখা যায়। একে বলা হয় ‘মুন বো’ । অনেকেই হয়তো মনে করেন যে, শুধু আকাশেই রংধনু দেখা যায় আসলে তা নয়। সমুদ্রের ঢেউ,
ঝরনা, ফোয়ারা ইত্যাদির মতো যেসব জলের উৎসের কাছে কুয়াশার মতো জলকণা বাতাসে ভেসে বেড়ায় সেসব জায়গাতেও সূর্যের আলোয় রংধনু সৃষ্টি হতে পারে।
রংধনু
নিয়ে একটি মজার বিষয় হলো, আপনি ও আপনার বন্ধু একই স্থানে দাড়িয়ে রংধনু দেখলেও হুবহু
একই ধরণের রংধনু দেখতে নাও পেতে পারেন। কারণ আপনার চোখের সরলরেখা ও আপনার বন্ধুর চোখের
সরলরেখা এক নয়। সুতরাং চোখের সরলরেখার সাথে উৎপন্ন হবে ভিন্ন ভিন্ন দুটি ৪২ ডিগ্রী
চোঙ্গাকৃত কোণ। সুতরাং আপনি যে সরলরেথায় যেরুপ রংধনু দেখছেন, আপনার বন্ধু দেখছে অন্যটি।
তথ্যসূত্রঃ
ওহ্ ফ্যাক্ট, দ্যা টেলিগ্রাফ,
সেন্টার ফর সায়েন্স এডুকেশন
www.livescience.com/30235-rainbow-formation-explainer
ইন্টারনেট ও বিভিন্ন ব্লগ
0 comments:
Post a Comment